চরম মন্দার মুখে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি

দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারির সময়ও পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি, যতটা খারাপ হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে। এই যুদ্ধকে মনে করা হচ্ছে দুই প্রতিবেশীর লড়াই, অথচ তার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি সাই সাই করে ওপরের দিকে উঠছে। ফলে আরেকবার চরম মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। খবর বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দার ছাপ সুপারমলগুলোতে, ফাইল ছবি

ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মূল্যস্ফীতিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। রুটির দাম প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বেড়েছে, ট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া বেড়েছে, সব জিনিসেরই দাম বা খরচ বেড়েছে। কিন্তু বেতন একটুও বাড়েনি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারগুলো বাজারের তালিকা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছে।

গ্যাসের মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই সে কথা রাখতে পারছেন না। আবার যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়েই তেলের দাম গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। মার্কিনিদেরও এর খেসারত দিতে হচ্ছে বর্ধিত মূল্য দেওয়ার মাধ্যমে। সকালে-বিকালে তেলের দামের হেরফের হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে উবার চালানো এক ড্রাইভার বলেন, আগে জ্বালানির পেছনে তার খরচ হতো আয়ের দশ শতাংশ। এখন ব্যয় হয় প্রায় ৬০ শতাংশ। কিন্তু কিছুই করার নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায়

পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হন সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে। কিন্তু তিনিও বাইডেনকে কোনো ইতিবাচক আশ্বাস দেননি। বরং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, আমরা সারা বিশ্বে আমাদের অংশীদার, বন্ধু, বিশেষ করে ভোক্তা দেশগুলোর কথা শুনি। কিন্তু ওপেক প্লাস দিনের শেষে বাজার পরিস্থিতি অনুসরণ করে, সেই মোতাবেক জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কথা আলাদাভাবে বিবেচনার কোনো অবকাশ নেই।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে এক পর্যায়ে গিয়ে অনুন্নত দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকবে না। তারাও অন্য দেশের মতো খাদ্য, জ্বালানিসহ নানা ধরনের সমস্যয় পড়বে।

রাশিয়া যখন ইউক্রেনে অভিযান চালাতে শুরু করে, তখন মনে হয়েছিল এটা কেবল পাশাপাশি দুই দেশের যুদ্ধ। অল্প কয়েকদিনেই এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব এ যুদ্ধে একটি পক্ষকে বিরামহীন সাপোর্ট দিয়ে যাওয়ায় যুদ্ধটি এখন মেয়াদহীন একটি প্রকল্পে পরিণত হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবাই। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর ক্ষতি এক্ষেত্রে কিছুটা বেশিই।