এশিয়ায় প্রবাসীদের বেতন-ভাতা সবচেয়ে কম মালয়েশিয়ায়

প্রবাসী কর্মীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির হিসাবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে মালয়েশিয়া। প্রবাসী কর্মীদের সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা প্রদানকারী দেশের তালিকায় বিগত বছরে মালয়েশিয়ার অবস্থান ছিল বিশ্বে ৪০তম। মাইএক্সপাট্রিয়েট মার্কেট পে জরিপের সর্বসাম্প্রতিক সংস্করণে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। খবর নিউ স্ট্রেইটস টাইমস।

মাইএক্সপাট্রিয়েট মার্কেট পে জরিপের তথ্য মতে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপানে কর্মরত প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পান

জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসীদের বেতন-ভাতা ও পারিতোষিক পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়ায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধির এ হার পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু ডলারের বিপরীতে মালয়েশীয় মুদ্রার বিনিময় হার এবং থাকা-খাওয়ার খরচের মতো আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের বেতন আশেপাশের দেশগুলোতে কর্মরতদের তুলনায় কমই বেড়েছে।

মাইএক্সপাট্রিয়েট মার্কেট পে জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ইসিএ ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক লি কুয়ান বলেন, বেতন-ভাতা ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও আদতে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে কর্মরতদের তুলনায় কম মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন।

দেখা গেছে, সিঙ্গাপুরে কর্মরত প্রবাসীদের বেতন-ভাতা ২০২১ সালে স্থানীয় মুদ্রার হিসাবে মাত্র ৪ শতাংশ বেড়েছে। অভিবাসী কর্মীদের জন্য বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশের তালিকার ২২তম স্থানে সিঙ্গাপুরের অবনমনের পরও সেখানে কর্মরতদের প্রকৃত বেতনে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

লি কুয়ান বলেন, সিঙ্গাপুরে বেতন-ভাতা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি অন্যান্য দেশের তুলনায় শুনতে কম মনে হয়। কিন্তু ওই ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে মার্কিন ডলারে হিসাব করলে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরে প্রবাসী কর্মীদের মোট বেতন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে। কোভিডের প্রথম ধাক্কার পর বেতন-ভাতার এই প্রবৃদ্ধি কম নয়।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে সিঙ্গাপুরে প্রবাসীদের বেতন গড়ে বার্ষিক ১ হাজার ডলার কমে গিয়েছিল। সেই পতন থেকে বেতন আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। একইসঙ্গে আবাসন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। কারণ, স্থানীয় বাজারে বাসা ভাড়া বাড়তে থাকায় নিয়োগদাতারা কর্মীদের থাকা-খাওয়ার খরচ বাবদ প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ বাড়িয়েছেন।

লি কুয়ানের মতে, সার্বিক বিচারে ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরে একজন প্রবাসী কর্মী নিয়োগের ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে বার্ষিক আড়াই লাখ ডলারের কাছাকাছি হয়েছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে প্রবাসীদের প্রকৃত আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ডলারের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মুদ্রার অবস্থান সংহত হওয়া, আয়কর বিধিমালায় পরিবর্তন ও চাকরির সুবিধাদি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাইএক্সপাট্রিয়েট মার্কেট পে জরিপে দুটি দেশেরই অবস্থানে উন্নতি দেখা গেছে। ২০২০ সালে অষ্টম স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া বিগত বছর সপ্তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে নিউজিল্যান্ড ১৬তম স্থান থেকে এগিয়ে ১৩-তে এসেছে।

জরিপের তথ্য মতে, এশিয়ায় প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি বেতন-ভাতা পান জাপানে। এরপর রয়েছে ভারত। চীন রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ২০২১ সালের জরিপে চীনের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের বেতন বাবদ প্রদত্ত নগত অর্থের পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় ডলারের হিসাবে ১১ শতাংশ বেড়েছে।

এ অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার মধ্যে হংকংয়ে ২০২১ সালে বেতন-ভাতা আঞ্চলিক গড়ের তুলনায় কম বেড়েছে। পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে বেতন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি হলেও অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা না বাড়ায় প্রকৃত আয় ১ শতাংশের বেশি বাড়েনি।