হুথিদের দাবি: ১৩ বিলিয়ন ডলারের তেল লুট করেছে সৌদি জোট

ইয়েমেনের হুথি-নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট এবং তাদের সহযোগীরা ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইয়েমেনের তেল-রাজস্বের ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লুটপাট করেছে। খবর মিডলইস্ট মনিটর।

ইয়েমেনের একটি তেলক্ষেত্র

ইয়েমেনের ন্যাশনাল নেগোসিয়েশন ডেলিগেশনের সদস্য আবদুল মালিক আল-আজরি এক টুইটে লেখেন, ওপেকসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক ট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি এ দাবি করছেন। এ সময় তিনি সৌদিভিত্তিক ইয়েমেনি সরকারকে ‘ভাড়াটে’ বলেও উল্লেখ করেন।

হুথি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন থেকে অবাধে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে হুথি-নেতৃত্বাধীন ইয়েমেন সরকার তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সময়মতো বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। তেল বিক্রির অর্থ হাতে পাওয়া গেলে তা দিয়ে বেতন পরিশোধের পাশাপাশি ইয়েমেনিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা যেত।

গৃহযুদ্ধ ও জোটবাহিনীর হামলায় মৃত্যুপুরী ইয়েমেন

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেল বিক্রির অর্থ জাতীয় বাজেটের ৮০ শতাংশের সমপরিমাণ। এ অর্থ ইয়েমেনে বিনিয়োগ করার পরিবর্তে সৌদি আরবের ন্যাশনাল ব্যাংকে সরবরাহ করা হয় কিংবা তুরস্ক, মিশরসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ করা হয়।

ইয়েমেনি তেল কোম্পানির মুখপাত্র ইসাম আল-মুতাওয়াক্কিলকে উদ্ধৃত করে গত মাসে অনুরূপ আরেকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, যে দেশগুলোর কাছে তেল সম্পদ নেই, তারা যেমন সমস্যাগ্রস্ত, ইয়েমেন একটি তেল উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও একই রকম সমস্যাগ্রস্ত। তিনি আরও বলেন, অপরিশোধিত তেলের যে রাজস্ব সৌদি ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে পাঠানো হয়, তা থেকে ইয়েমেন কোনোরকম লাভবান হয় না।

সূত্রের বরাত দিয়ে ইয়েমেন প্রেস এজেন্সি জানায়, সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনি সরকার পূর্ব ইয়েমেনের হাদরামাউত প্রদেশের তেলক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত ১৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দুই মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বিক্রি করেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এ তেল সরবরাহ করা হবে।

মারিব, শাবওয়া ও হাদরামাউত তেলক্ষেত্র থেকে তোলা এই বিপুল পরিমাণ তেলের রাজস্ব ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হয় না, বরং এই অর্থ চলে যায় জেদ্দার সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংকে জোট-সমর্থিত কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্টে। অথচ ইয়েমেনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে না, মানবেতর জীবন যাপন করছে।

গত ছয়-সাত বছর ধরে জল, স্থল ও আকাশপথে ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছিল সৌদি আরব। এর ফলে দারিদ্রপীড়িত দেশটির অর্থনৈতিক দুরবস্থা চরমে পৌঁছেছে।

ইয়েমেনে ২০১৪ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। এর পরের বছর ইয়েমেন সরকারের সমর্থনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সামরিক জোট হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তৈরি হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুতর মানবিক সঙ্কট। বর্তমানে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও আর্থিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি ইয়েমেনবাসীদের জীবনে।