শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটা মুখে আনলেন না পোপ!

প্রথমবারের মতো মিয়ানমার সফরে গেছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। গতকাল সোমবার দুপুরে পোপকে বহনকারী প্লেনটি মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুনে অবতরণ করে। এই সফরে পোপ যেন কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে না আনেন সে ব্যাপারে বারবার অনুরোধ করেছিল মিয়ানমার। পোপ যেন সেই কথাটিই রাখলেন। সফরে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে আনেননি তিনি।

মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দেয়া ভাষণে একবারের জন্যও 'রোহিঙ্গা' শব্দটি ব্যবহার করেননি তিনি। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, হাজারো সমর্থক, অনুসারীর সামনে দেয়া ভাষণে দ্বন্দ্ব, বিরোধ এসব শব্দ ব্যবহার করেছেন পোপ। তবে তিনি বক্তব্যে একবারও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।

পোপ ফ্রান্সিস এমন এক সময় মিয়ানমার সফর করছেন, যখন রোহিঙ্গাদের কান্না আর রক্তে ভারী হয়ে আছে মিয়ানমারের আকাশ। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগতভাবে নিধনের অভিযোগ এনেছে।

পোপের এই ঐতিহাসিক সফরের প্রাক্কালে মিয়ানমারের সরকারি দপ্তর অবশ্য রোহিঙ্গা শব্দটি প্রত্যাখ্যান করেছে। পোপকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শটি দিয়েছেন মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ চার্লস মোং বো। এর আগে পোপকে একই ধরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানও।

নেপিদোতে দেয়া ভাষণে পোপ বলেছেন, 'ধর্মীয় ভিন্নতা কখনো বিভেদ ও অবিশ্বাসের উৎস হতে পারে না। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন একতা, ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিজ্ঞ মনোভাবের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।'

চলতি বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর শুরু করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের হিসাবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কমপক্ষে আট লাখ।

আগামী বুধবার ইয়াঙ্গুন শহরে এক উন্মুক্ত সমাবেশে পোপের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসবেন তিনি। আগামী শুক্রবার ঢাকায় রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে পোপের।