বারাক ওবামাকে মুসলিম মনে করে মধ্যপ্রাচ্য!

বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি, মুসলিমদের বিষয়ে সহনশীল মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে মার্কিন মুলুক। দেশটিতে গুঞ্জন উঠেছে বারাক ওবামা নিজেকে খ্রীষ্টান হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন মুসলিম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ওবামার মাথায় আরবি লেখা যুক্ত একটি প্লেকার্ড জড়ানো ছবিও পাওয়া গেছে।

জনপ্রিয় গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে কলামিস্ট এডাম টেইলর জানান, প্রায় এক দশক আগে বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন মধ্য ইউরোপে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন মুসলিম। তবে ওবামা নিজেকে একজন খ্রীষ্টান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও এই ‘অপ-প্রচার’ বন্ধ হয়নি। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয় একটি গণমাধ্যমে ‘বারাক ওবামা মুসলিম কি না’ এমন একটি জরিপে ৫৪ শতাংশ মানুষ ভোট দেন, ওবামা একজন মুসলিম।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান বংশোভূত প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এই অপ-প্রচার ছড়াতে পারে। পাশাপাশি ওবামার বর্ণ পরিচয়, জাতিগত পরিচয়ও জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের বাইরে কিছু চুক্তি স্মাক্ষরও ওবামাকে মুসলিম মনে করার জন্য দায়ী হতে পারে। তবে ওবাকে নিয়ে সবেচেয়ে বহুল প্রচলিত গুঞ্জনটি হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র একজন মুসলিম নন, তিনি একজন শিয়া মুসলিম।

চলতি সপ্তাহে ওবামা প্রশাসন ঘোষণা দেয় যে আগামী জুলাই-এর মধ্যে ইরানের ওপর আরোপিত পারমানবিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। দুবাই এমিরেটস-এর নিরপত্তা বিভাগের প্রধান দাহি কালফান তামিম মনে করেন, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সু-সম্পর্কের অন্যতম কারণ ওবামার ‘শেকড়’ শিয়া মুসলিম। যা ওবামার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গতবছর ইরাকের সংসদ সদস্য তালহা আল লাহিবি একটি ভিডিও ফুটেজে ওবামার শিয়া মুসলিম হওয়ার নানা বিষয় ব্যাখ্যা করেন। একই সময় সিরিয়ার লেখক মুহিদিন লাজিকিন একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকারে বলেন, বারাক ওবামার বাবা কেনিয়ার একজন শিয়া মুসলিম। এমনকি ২০০৮ সালে ইরানের একটি পত্রিকায় দাবি করা হয় ওবামা শিয়া মুসলিম। এর কিছুদিন পর একজন শিয়া মুসলিম টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে আমাদের একজন ভাই আছে’।

তবে বারাক ওবামার শিয়া মুসলিম হওয়াটা আরো বিশ্বাসযোগ্য করেছে তার নামের মধ্যে 'হোসাইন' রয়েছে যেটা শিয়া মুসলিমদের একটি কমন বৈশিষ্ট্য। তবে অনেক সুন্নি মুসলমান এবং অমুসলিমদের মধ্যেও নামের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এদিকে কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করা ওবামার বিচ্ছিন্ন বাবা নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করেন। তিনি বলেন, আমি মুসলিম ছিলাম পরে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করি। তবে কেনিয়ায় সুন্নি মুসলমানের সংখ্যা শিয়াদের চাইতে অনেক বেশি। ওবামা নিজেও মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দীর্ঘসময় কাটান। ওবামার সৎ বাবা ছিলেন মুসলিম। ইন্দোনেশিয়ায় থাকা অবস্থায় ওবামা প্রথমে একটি ক্যাথলিক বিদ্যালয়ে পাঠ নেন পরে মুসলিম অধ্যুষিত স্টেট বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। যদিও বিদ্যালয়টি ধর্ম-নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

তবে ওবামা যে একজন শিয়া মুসলিম এ বিষয়ে এসব বিভিন্ন প্রমাণাদি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করেন কালফা তামিম ও অপ-প্রচারকারীরা। এমনকি ইরাকিরাও মনে করে ওবামার নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন সুন্নি গোষ্ঠীর বিভিন্ন উগ্রপন্থী কার্যক্রমকে সমর্থন করে। কিছু শিয়া মুসলমানও মনে করেন ওবামা গোপনে একজন সুন্নি এবং শিয়াদের বিরুদ্ধে কাজ করেন।

আপনি আরো পড়তে পারেন

নিষেধাজ্ঞার পরও ইরানের সাথে ব্যবসা করবে আমেরিকা

এশিয়ায় যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে আমেরিকা

আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের বাসে হামলা, নিহত ৭