করোনাভাইরাস: ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার আকুতি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বসবাস করা প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেখানকার পরিস্থিতি ও ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে পোস্ট দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল তূর্য এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, উহান শহর থেকেই পুরো চীনে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। শহরটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যায়নরত।

তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শহরটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন এবং ছয় শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে সতর্কতার জন্য উহান থেকে অন্যান্য প্রদেশে যাওয়ার সকল বাস-ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। তাই চাইলেও এখন আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।

চীনে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়ার যে খবর দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন ওই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার খোঁজ নেওয়া হয়নি। আমরা সবাই এক কঠিন মুহূর্ত পার করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।’

ইমশিয়াত শরিফ নামের আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাস, ট্রেন, বিমান, দোকানপাট সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে ইউনিভার্সিটিতে শীতকালীন ছুটি থাকায় ক্যাস্পাস ফাঁকা। উহান শহরটাও একদম জনশূন্য। সবদিকে আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।’

এদিকে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনে বসবাসরত ও ভ্রমণরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস এই হটলাইন চালু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। হটলাইন নম্বর (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হঠাৎ করেই উহান শহরে ছড়িয়ে পড়ে রহস্যজনক ওই ভাইরাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি। এর ফলে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা শতভাগ।

চীনের সরকারি গণমাধ্যম শনিবার সকালে বলেছে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আরো অন্তত ১৩ শ। যদিও অন্যান্য সূত্র বলছে, দুই হাজারের  বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে, প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ইতোমধ্যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বিমানবন্দর ও সংশ্লিষ্ট স্থানে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।