তবে কি চীনের ল্যাব থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ালো?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনে ছড়িয়ে পড়া রহস্যজনক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।আক্রান্তের সংখ্যাও এক লাখ ছাড়িয়েছে। ভাইরাসটি নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখছে চীন সরকার। তবে ব্রিটেনের গণমাধ্যম ডেইলি মেইল দাবি করেছে, চীনা ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। গতকাল শনিবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি।
এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী 'নেচার' এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে চীনা গবেষকদের সতর্ক করেছিল। তারা বলেছিল, বিপদজ্জনক ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে চীন যে ল্যাব (পরীক্ষাগার) তৈরি করছে তা থেকে ভাইরাস আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ডেইলি মেইল জানায়, সে সময় ল্যাবটি তৈরি করা হচ্ছিল চীনের উহান শহরে। নেচার সাময়িকীতে যে সতর্কবাণী দেয়া হয়েছিলো তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উহান শহরেই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এখন আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। যে ৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন উহান শহরের বাসিন্দা।
২০১৭ সালে চীন উহান প্রদেশে একটি উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ল্যাব তৈরি করে। যেখানে ইবোলা, সার্সের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজ্জনক কিছু ভাইরাস নিয়ে কাজ করার কথা জানায় বেইজিং। চীনা গবেষকরা দাবি করেছিল, গবেষণা ল্যাবটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
নেচার সাময়িকীতে ২০০৪ সালে চীনের একটি ল্যাব থেকে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, চীনের ল্যাব থেকে সার্স ভাইরাস কয়েকবার ছড়িয়ে পড়েছে। ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা চীনে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার ঘটেছে।
উহান ন্যাশনাল বায়োসেফটি ল্যাবরেটরিটি উহানে অবস্থিত হুনান সি-ফুড মার্কেট অর্থাৎ হুনানের সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী ওই বাজারের একজন বিক্রেতা। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর গবেষকরা বলে আসছিলেন যে, বন্যপ্রাণী থেকে এ ভাইরাস মানবদেহে এসেছে। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে, উহানের ওই ল্যাব থেকেই ভাইরাসটি মাছে প্রবেশ করেছে এবং মাছের মাধ্যমে তা মানবদেহে প্রবেশ করেছে। এই সন্দেহকে চীনা গবেষকরাও হেলা-ফেলা মনে করছেন না বলে দাবি ডেইলি মেইলের।
২০১৫ সালে ল্যাবটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ল্যাবটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিপদজ্জনক ভাইরাসগুলোর গবেষণা করে সেগুলোর প্রতিষেধক বের করা। মূলত ভাইরাস নির্মূলে বিশ্ব দরবারে চীন তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চেয়েছিল ল্যাবটি ব্যবহার করে। এটি চীনের সর্বপ্রথম বায়োসেফটি লেভেল-৪ (বিএসএল-৪) মানের ল্যাব। বিএসএল-৪ হলো সর্বোচ্চ বিপদজ্জনক ভাইরাস, এগুলো নিয়ে নিরাপদে কাজ করা যায় এমন ল্যাবকেই বিএসএল-৪ ল্যাব বলা হয়।
এই ল্যাবে একটি বিশেষ ক্যাবিনেট বা কক্ষ ব্যবহার করা হয় যা বায়ুশূন্য থাকে। ক্যাবিনেটের ভেতরে গবেষকরা নভোচারীদের স্পেস স্যুটের মতো বিশেষ জামা পরিধাণ করেন। হাতে ব্যবহার করেন উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্লাভস। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো রাখা হয় বায়ুরোধক বাক্সে। গবেষকরা সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো বের করে বায়ুশূন্য কক্ষে সেগুলো পরীক্ষা করে থাকেন। এ রকম ল্যাব বিশ্বে ৫৪টির মতো আছে।
২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করার পর নির্দিষ্ট মান থেকে এক লেভেল কম অর্থাৎ বিএসএল-৩ লেভেলর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ শুরু করে ল্যাবটি। প্রথমে ল্যাবটিতে টিক-বোর্নস ভাইরাস নিয়ে কাজ করা হয়। এ ভাইরাসের কারণে ক্রিমিন-কঙ্গো হেমোরোহেজিক ফিভার রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ ও বিভিন্ন জীবজন্তু। এ রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ।
টিক-বোর্নস ভাইরাস নিয়ে কাজ করার পর গবেষকরা সার্স ভাইরাস নিয়ে ল্যাবে কাজ শুরু করেন।
উল্লেখ্য, সার্স ভাইরাসও বিএসএল-৩ লেভেলর ভাইরাস। এর পর ২০১৮ সালে তারা বিএসএল-৪ লেভেলের ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে অগ্রসর হন।
২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর পর নেচারকে ল্যাবের পরিচালক গুইঝেন উ জানিয়েছিলেন, ল্যাব থেকে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া্র মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় সে জন্যে বিএসএল-৪ ল্যাবে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেজন্য নানা উপায় অবলম্বন করতে বলেছে গবেষকদের। এই ল্যাবে তারা সবচেয়ে বিপদজ্জনক সার্স, করোনাভাইরাস, প্যান্ডেলিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, এসব ভাইরাসের কারণে যে রোগ হয় তার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্যই ল্যাব ব্যবহৃত হবে।
নেচার সাময়িকীতে আরো জানানো হয়, চীনের উহান ল্যাবে এসব ভাইরাসের পরীক্ষা চালানো হবে বিভিন্ন জীবজন্তুরের ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের থেকে চীনে এ পরীক্ষা তুলনামূলক সস্তা হবে। কারণ চীনে জীবজন্তু বিষয়ক আইন বেশ নমনীয় এবং তাদের ওপর বিভিন্ন গবেষণায় তেমন বাধা-নিষেধ নেই।
বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে সনাক্ত করা হয়। এক মাস পার না হতেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যাও অর্ধশত পেরিয়েছে। তবে চীনা সরকার বলছে, নতুন ধরনের এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতে দাঁড়ালেও আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি। ভাইরাসটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
ভাইরাসটি ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্তত ১৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে তাদের বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.