আপনি পড়ছেন

করোনা ভাইরাসের চোরা আঘাতে বিপর্যস্ত ইরান। এর মধ্যেই দেশটিতে প্রায় অর্ধ লক্ষ লোক মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। দেশটিতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি যখন বেসামাল, তখন ইরান থেকে এক লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী ফিরে যাচ্ছে আফগানিস্তানে। যা ইরানে প্রতিবেশি এই দেশকে ফেলতে চরম বিপর্যয়ে।

afghanistan might face big trouble due to coronavirus

করোনা ভাইরাসকে মহামারী ঘোষণার পর এতো বেশি সংখ্যক শরণার্থীর দেশে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেনি। এ দিকে, এ ঘটনা তৈরি করেছে নতুন আতঙ্ক। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান থেকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করা এই লক্ষাধিক মানুষের বড় একটা সংখ্যাক হয়তো করোনা ভাইরাসের দ্বারা ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন এবং তাদের উপস্থিতি আফগানিস্তানকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিবে।

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপানা এমনিতেই এলোমেলো। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে, অন্তত দেড় কোটি আফগান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের মধ্য থেকে মৃত্যু হতে পারে বহু লোকের। এই পরিস্থিতিতেই আফগানিস্তানে ঢুকে পড়লেন প্রায় দেড় লাখ শরণার্থী। তাও আবার এমন দেশ থেকে, করোনা ভাইরাসের কারণে যারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে আরো ঘোরতর ঝুঁকিতে ফেলে দিলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ সম্প্রতি একটি যুগ্ম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত ১৭৪ জনের করোনা ভাইরাস আক্রান্তের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, এটি পরিস্থিতির যথাযথ মূল্যায়ন নাও হতে পারে। জাতিসংঘ মনে করে, আফগানিস্তানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি, কিন্তু পরীক্ষা করার ব্যবস্থা কম থাকায় প্রকৃত সংখ্যা বের করা তাদের জন্য কঠিন।

afghanistan might face big trouble due to coronavirus 2

এ দিকে, নরওয়েজিয়ান শরণার্থী কাউন্সিল বলছে, তাদের দৃষ্টি এখন ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দিকে। ইরানের করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর এই সব এলাকায় শরণার্থীদের চলাচলের কারণে নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এই সব এলাকাই এখন সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নরওয়েজিয়ান শরণার্থী কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান থেকে যে সব শরণার্থী আফগানিস্তানে ফিরে এসেছেন, তারা দেশটির ২৫টি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে আছে হেরাত, নিরোজ, কাবুল, বালখ, ফারয়াব। তাদের মতে, আফগানিস্তানের এই ২৫টি জেলাই এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

এই ঝুঁকিকে আরো যুক্তিসঙ্গত করে তুলছে এই তথ্য- এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে যতো করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের বেশির ভাগই হেরাত জেলার বাসিন্দা। এই জেলাটি ইরান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এবং এই এলাকা দিয়ে প্রচুর শরণার্থী যাতায়াত করেন। সুতরাং শরণার্থীদের পদচারণা যে দিকে বাড়বে, করোনা ভাইরাস সে দিকেই বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

একটি আন্তর্জাতি সংবাদ মাধ্যম, ইরান থেকে হেরাতে ফিরে আসা একজন শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে যে, এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন দুটি কারণে। একটি হলো ইরানে ভাইরস ছড়িয়ে পড়েছে এবং অন্যটি হলো ইরানে আরোপ করা লকডাউনের কারণে শরণার্থীরা কোনো কাজকর্ম করতে পারছেন না ফলে তারা মারাত্মক অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

১৮ বছর বয়সী মিরওয়াইজ নামের একজন শরণার্থী সংবাদ মাধ্যমটিকে বলেন, “আমি ইরানে দুই বছর ধরে দিনমজুরির কাজ করছিলাম। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এই পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো বেশি খারাপ হচ্ছে। ফলে আমার দেশে ফিরে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। একই সাথে আমি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়েও ছিলাম।”

মিরওয়াইজ আরো বলেন, “দেশে সামান্য কিছু টাকা পাঠানোর জন্য ইরানে আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে এবং প্রচুর অপমানও সহ্য করেছি। কিন্তু আমি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরতে চাই না। কারণ আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমি যদি মরে যাই, আমার পরিবার পথে বসবে এবং তাদেরও না খেয়ে মরে যেতে হবে। আমি জানি না এখন কী করবো, কোথায় যাবো। হয়তো আমাকে একদম খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হবে। কারণ আমার কাছে যে টাকা ছিলো, সীমান্ত পর্যন্ত আসতে আসতে তা শেষ হয়ে গেছে।”

জানিউল্লাহ নামের ২৪ বছর বয়সী এক যুবকও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি ইরানে একটি চেয়ার তৈরি করার কারখানায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, “ইরানে গত মাসে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আমি বিপদে পড়ে গেছি। বিয়ে করার জন্য আমার চার লাখ আফগানি মুদ্রা দরকার ছিলো। ইরানে কাজ করে এর অর্ধেক আমি উপার্জন করেছি। এখন বাকি অর্ধেক পরিশোধের চাপে পড়ে গেছি। আমি জানি না এখন কী করবো। করোনা ভাইরাস আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।”

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.