আপনি পড়ছেন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টালমাটাল বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বাতিল কিংবা স্থগিত করা হচ্ছে। তাই বলে এ বছর হজও কি বাতিল হবে? যদি হয়, তাহলে সেটা অবশ্য খুব অবাক করা সিদ্ধান্ত হবে না। কারণ সৌদি আরবের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো এ নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যেতে পারে, এর আগে কতবার হজ বাতিল হয়েছিল এবং কী কারণে।

kabah makka saudi arabiaপাখির চোখে মক্কা মুকাররমা

৮৬৫

প্রথমবার হজ বাতিল হয়েছিল ৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে। হাজীরা অনেকেই জমায়েত হয়েছেন আরাফাতের ময়দানে, বাকিরা আসছেন। এমন সময় হজের কিছুদিন আগে হঠাৎ করে হাজীদের ওপর আক্রমণ চালান আরব নেতা ইসমাইল বিন ইউসুফ। তিনি আল সাফাক নামে সর্বাধিক পরিচিত। বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার সঙ্গে শত্রুতার জেরে এই হামলা চালানো হয়। ফলে ওই বছর বন্ধ হয়ে যায় পবিত্র হজ।

৯৩০-৯৪০

‘কারামাতি’ নামে কট্টর একটি শিয়া গ্রুপ হামলা চালায় মক্কা শরীফে। ইতিহাস বলছে, সেসময় প্রায় ৩০ হাজার হাজীকে হত্যা করা হয়। লুটতরাজ করা হয় মসজিদে হারাম ও তার আশপাশের এলাকায়। ঐতিহাসিক কালো পাথরটি নিয়ে যাওয়া হয় বাহরাইনে। প্রায় ১০ বছর পর মক্কায় ফিরিয়ে আনা হয় সেই পাথর। ওই দশ বছর হজ অনুষ্ঠিত হয়নি।

hajre aswadহাজারে আসওয়াদ, যা কালো পাথর নামেও পরিচিত

৯৬৮

বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ তে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯৬৮ সালে মক্কায় একটি মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনেক লোকসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হাজীরাও মারা যান ওই মহামারিতে। শুধু তাই নয়, হাজীরা যে উটগুলো নিয়ে মক্কায় এসেছিলেন, পানির অভাবে সেগুলোও মারা যায়। এসব কারণে ওই বছর হজ অনুষ্ঠিত হয়নি।

৯৮৩-৯৯০

এই ৮ বছর হজ না হওয়ার পেছনে দায়ী ছিল তখনকার রাজনীতি। সেসময় ইরাক ও সিরিয়ায় ছিল আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিশরে ছিল ফাতেমীয় খিলাফত। এই দুই খিলাফতের শাসকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠায় হজ বাতিল হয়ে যায় এবং কাবা শরীফের কপাট বন্ধ থাকে ৮ বছর ধরে।

১২৫৮

এ বছর বাগদাদ আক্রমণ করেন হালাকু খান। সেই আক্রমণ ছিল ভয়ংকর, বাগদাদ শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। খলিফাসহ হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। এই আক্রমণের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম বিশ্বে। কোনো মুসলমানই ওই বছর হজে যাননি। বন্ধ করে দেওয়া হয় হজ ও ওমরার কার্যক্রম।

hajj 1953শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করছেন হাজীরা, ১৯৫৮ সাল

১৮১৪ ও ১৮৩১

এই দুই বছরই হজ বাতিল করা হয় মহামারি প্লেগের কারণে। ১৮১৪ সালে প্লেগের সংক্রমণে সৌদি আরবের হেজাজ প্রদেশে মারা যায় ৮ হাজার মানুষ। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই শঙ্কায় হজ বাতিল করা হয়। ১৮৩১ সালে আবারও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে প্লেগ। সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, হাজীদের চারভাগের তিনভাগই মৃত্যুবরণ করেন। ফলে সে বছরও হজ বাতিল করা হয়।

এছাড়া ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে প্লেগ ও কলেরার কারণে মোট সাতবার হজ বাতিল করার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসময় বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ হজ পালন করেছিলেন বলে জানা যায়।

arafat fieldআরাফাতের ময়দানে অবস্থান

উপরে উল্লিখিত নির্দিষ্ট বছরগুলো বাদে বিভিন্ন সময় হজ পালনে নানারকম বাধা এসেছে। ফলে কখনো কখনো হজ অনুষ্ঠিত হয়েছে আংশিকভাবে কিংবা শুধু স্থানীয়দের দ্বারা। ১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর জুহাইমান আল ওতাইবি নামক সৌদি আরবের এক সেনা সদস্য তার শিষ্যদেরকে নিয়ে কাবা ঘর দখল করে বসেন। তিনি ঘোষণা করেন, তার ভগ্নিপতি ইমাম মাহদি রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এসময় প্রায় দুই সপ্তাহ কাবাঘর অবরুদ্ধ ছিল, কোনো তাওয়াফ অনুষ্ঠিত হয়নি।

সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে ইরানি হাজীরা কাবা চত্বরে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। সৌদি আরবের পুলিশ তাদের বিক্ষোভে বাধা দিলে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। মারা যান অনেক হাজী, কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় তাওয়াফ। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে ২০১৬ সালেও ইরান তার দেশের কাউকে হজে পাঠায়নি।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.