আপনি পড়ছেন

চীনের পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাপুরে যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই বিদেশি শ্রমিক। আর এর একটা বড় অংশ বাংলাদেশি শ্রমিক। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে আক্রান্ত হয়ে এক বাংলাদেশি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় চলে যান। বলা চলে, ‘মৃত্যুর খুব কাছাকাছি ছিলেন’ রাজু সরকার নামের ওই বাংলাদেশি। তবে অবশেষে দীর্ঘ সময় পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রথমেই খাশির গোশত খেতে চেয়েছিলেন। তিনি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় গত ৩০ মার্চ তার স্ত্রী ছেলে সন্তান প্রসব করেন। আইসিইউ থেকে ছাড়া পেয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রথম ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেন রাজু সরকার। এর পর থেকে প্রায়ই তিনি পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন।

raju sarker bangladeshi singaporeরাজু সরকার

সিঙ্গাপুরভিত্তিক গণমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজু সরকার গতকাল শুক্রবার টান টক সেং হাসপাতাল (টিটিএসএইচ) থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তবে এই সময়ে তার ওজন কমেছে ২৪ কেজি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় পাঁচ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী রাজু সরকার। যার প্রায় অর্ধেক সময়ই কেটেছে আইসিইউতে।

প্রসঙ্গত, দেশটিতে প্রথম যে কয়েকজন বিদেশি কর্মী কোভিড-১৯ সংক্রমিত হন, তাদের একজন হলেন রাজু সরকার। ফেব্রুয়ারির শুরুতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাকে টিটিএসএইচ পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

tan teck seng hospital singapore rajuহাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় রাজু সরকার

হাসপাতালটির রেসপিরেটোরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বেঞ্জামিন হো বলেন, দীর্ঘ সময় আইসিইউতে কাটিয়েছেন রাজু সরকার। এর পরও নাটকীয়ভাবে তার সুস্থ হয়ে উঠায় বিস্মিত হয়েছেন চিকিৎসকরাও।

তিনি জানান, রাজু সরকার যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন খুবই অসুস্থ ছিলেন। এমনকি দুই থেকে তিন বার তিনি ‘মৃত্যুর মুখে’ চলে গিয়েছিলেন।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনসিআইডি) আইসিইউ পরিচালক ডা. হো আরো বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় তার রক্তচাপ খুব কমে গিয়েছিল, এমনকি খুব কম অক্সিজেন নিতে পারছিলেন তিনি। তারা ভেবেছিলেন, রাজু সরকারকে অনেক দিন অক্সিজেন দেওয়া লাগবে। চিকিৎসকরা এও ভেবেছিলেন যে, সিঙ্গাপুরে করোনায় প্রথম দিককার মারা যাওয়াদের একজন হবেন তিনি।

স্ট্রেইট টাইমস বলছে, রাজু সরকার যখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন গত ৩০ মার্চ তার স্ত্রী একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। আইসিইউ থেকে ছাড়া পাওয়ার এক সপ্তাহ পর এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ভিডিও কলে প্রথম ছেলেকে দেখেন রাজু সরকার।

হাসপাতালের সেবিকারা জানান, প্রায়ই ফোনে রাজু সরকার তার পরিবারের ছবি দেখতেন। সেইসঙ্গে প্রায়ই বাড়িতে ফোন দিতেন।

স্ট্রেইটস টাইমসকে রাজু সরকার বলেন, ‘আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। আশা করছি, তিন বা চার মাসের মধ্যে বাড়ি যেতে পারবো।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্ত মনোবল নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন রাজু সরকার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রথমেই খাশির গোশত খেতে চেয়েছিলেন বলে জানান রাজু।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনো পরিপূর্ণ সুস্থ নন বাংলাদেশি এ প্রবাসী। বরং তিনি সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। কারণ করোনাভাইরাস তার শরীরে অনেকভাবে প্রভাব ফেলেছে। তার লবণ ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেছে এবং হৃদযন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া কোভিড-১৯ আক্রান্তের কারণে তার ফুসফুস, থাইরয়েড ও কিডনির জটিলতাও দেখা দিয়েছে। কিডনি সচল রাখতে সাময়িকভাবে তার ডায়ালাইসিসও করতে হবে। সেইসঙ্গে দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার কারণে তার মস্তিষ্কেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

স্ট্রেইটস টাইমস বলছে, হাসপাতাল থেকে দুই মাসের জন্য ছাড়া পেয়েছেন রাজু সরকার। এর পর ফলো-আপের জন্য তাকে আবার হাসপাতালে আসতে হবে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, রাজু সরকার সুস্থ হয়ে উঠার পেছনে তার নিজের অনেক ভূমিকা ছিল। তিনি নিয়মিত চিকিৎসকের শেখানো ব্যায়াম ও অন্যান্য বিষয় নিজের আগ্রহ থেকেই পালন করেছেন। এক্ষেত্রে পরিবারের প্রতি তার যে টান, সেটা অনেকটা ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করেন তারা।

সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, রাজু সরকার যখন পুরোপুরি সুস্থ তথা কাজের জন্য ফিট হবেন, তখন তার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কিছু ঠিকঠাক করা হবে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.