মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি করছে করোনা!

মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মানবদেহে অনেক জটিল রোগের উৎপত্তি হয়। শুরুর দিকে চিকিৎসকদের ধারণা ছিল, এর কারণে শুধু ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে সংক্রমণ হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে জানা গেল, এই ভাইরাসের কারণে দেহে বেশ কিছু মারাত্মক রোগ দানা বাঁধে। সম্প্রতি ব্রিটিশ গবেষকরা দেখতে পান, এর কারণে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি হয়। অনেকে স্ট্রোক করে মারা যান।

করোনার কারণে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে জানা যায়, গবেষকদের এই বিশ্লেষণ সম্প্রতি দ্য জার্নাল ব্রেইন সাময়িকীতে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে ৪০ জন করোনা রোগীর মস্তিষ্কের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন গবেষকরা।

তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার পর আমরা জীবন নাশকারী রোগ অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড এনসেফ্যালোমাইয়েলিটিস (এডেম) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনের ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে যেখানে প্রতিমাসে একজন রোগী পাওয়া যেত এডেমে আক্রান্ত। সেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু পর এপ্রিল ও মে মাসে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ৪০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ১০ জনের মস্তিষ্কে সাইকোসিসজনিত সমস্যা পেয়েছেন গবেষকরা। ৮ জনের স্ট্রোক হয়েছে, ৮ জনের মস্তিষ্কের নার্ভে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের গুলিয়ান বারি রোগের উৎপত্তি হয়। এর কারণে রোগীদের ইমিউন সিস্টেম তীব্র প্রতিক্রিয়া করে, ফলে মস্তিষ্কে নানা জটিলতা দেখা দেয়।

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের নেতৃত্ব দেয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হাসপাতালের অধ্যাপক মাইকেল জান্ডি বলেন, এর আগে আমরা কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কে ক্ষতি হতে দেখিনি। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর অনেকেই এডেম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যা হয়তো আগে কেউ ভেবেও দেখেনি। এসব ঘটনা আমাদের আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এডেম এমন একটি রোগ, যা রোগীর ওপর দীর্ঘস্থায়ী কিংবা চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে। অনেকের শারীরিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে এই রোগ থেকে সুস্থও হয়ে উঠে।

গবেষকরা ৫৫ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নারীর কথা উল্লেখ করে দ্য জার্নাল ব্রেইনে লেখেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়ি ফিরে তিনি সবার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকদের তিনি জানান, বাড়িতে তিনি বানর ও সিংহ দেখেছেন।

গবেষকরা বলছেন, এটি হ্যালোসিনেশন থেকে হতে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মস্তিষ্কের এই রোগ সম্পর্কিত কোনো জটিলতাই ছিল না। কীভাবে এই রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধলো তা একটি রহস্য। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই এই জটিলতায় ভুগছেন। যা নতুন করে ভাবাতে আমাদের বাধ্য করছে।