আরেক বাংলাদেশি নিহত, মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ১০০

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো এক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে মোট দুইজন বাংলাদেশি প্রবাসী মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অফ চ্যান্সারি আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গতকাল সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে

আজ বুধবার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশির প্রাণহানি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা দুজনই দেশটিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত ৫৯ জন প্রবাসী বাংলাদেশির আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ১০ জন স্থানীয় দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি ৪৯ জনকে চিকিৎসা শেষে ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে একজনের বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ায় এবং অপরজনের বাড়ি শরীয়তপুরে। বৈরুতের যে স্থানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণটি হয়েছে তার আশপাশে অনুমানিক ৩-৪ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। এই দুইজন ছাড়াও আরো কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দূতাবাস তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

বিস্ফোরণে আহত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা

এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, এ বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পাশাপাশি বৈরুত বন্দরে অবস্থান করা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস বিজয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৬ জনকে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া বাকি ১৫ জন সামরিক সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

লেবাননে ২৫ বছর ধরে কাজ করা বাবু সাহা নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিক জানান, বিস্ফোরণে মেহেদী হাসান ও মিজান নামের দুই বাংলাদেশি প্রবাসী মারা গেছেন। এর মধ্যে মেহেদী হাসানের বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ার বাদেশ্বরা গ্রামে। তিনি বৈরুতের আশরাফি এলাকার একটি সুপার মার্কেটে কাজ করতেন। বর্তমানে তার মরদেহ মাউন্ট লেবাননে রয়েছে। নিহত মিজানের বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গতকাল সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে

এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকে থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের লেবানিজ শাখার প্রধান জর্জ কিত্তানেহ।

বুধবার স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এলবিসিআই টিভিকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে জর্জ বলেন, ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর রাস্তায় যত্রতত্র রক্তাক্ত অবস্থায় হতাহতদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি একসঙ্গে অনেক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসায় হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলো। অনেক হাসাপাতালে রোগী ভর্তি হতে পারছেন না।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্য আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণ দুটির তীব্রতা এতই বেশি ছিলো যে সেখানে ৩ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর তীব্রতা টের পাওয়া যায় বৈরুত শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্তে অবস্থিত সাইপ্রাসেও। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের স্থাপনাও। বিস্ফোরণের পর শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, বৈরুতের বন্দরের কাছে একটি রাসায়নিক গুদাম ছিলো। যেখানে গত ৬ বছর ধরে ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিলো। সেই রাসায়নিক থেকেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।