২০২০ সাল যেন দোজখ থেকে এসেছে!

লেবাননে বসবাসরত সবাই ২০২০ সালটিকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কারণ করোনাভাইরাসের মহামারি, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সর্বশেষ দেশটির রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়েছে এই বছরটি। লেবানিজদের কাছে চলতি বছরটি যেন বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে।

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দৃশ্য

আল আরাবিয়ার বরাতে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশটিতে ক্রমশ বেড়েই চলছে। সেইসঙ্গে সরকারের দুর্নীতি অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। জীবনযাপন যখন অতিষ্ঠ, তখনই বৈরুতের বিস্ফোরণ কেড়ে নিলো শতাধিক প্রাণ। আহত হয়েছে ৪ হাজারের অধিক মানুষ।

বৈরুতের বাসিন্দা কারিম নাহৌলি বলেন, এটি লেবাননের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে বছর। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমাদের এখানে গৃহযুদ্ধ হয়েছে। এরপর ২০০৬ সালে আমরা ফের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু এতো বিপর্যয় আগে দেখেনি এখানকার মানুষ। এই বছর যেন দোজখ থেকে এসেছে।

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দৃশ্য

গত কয়েক বছর ধরেই দেশটির মুদ্রামান হ্রাস পেতে শুরু করে বলে জানা যায়। তবে ২০২০ সালে সেই মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এক ডলারের বিপরীতে এখন ১ হাজার ৫০৭ লিবিয়ান পাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চমূল্যের কারণে দেশটির কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে ডলার। সাধারণ মানুষ তাদের থেকে ১ ডলারের বিপরীতে ৮ হাজার পাউন্ড দিচ্ছে।

ডলারের মূল্য বাড়ার পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে লেবাননে খাদ্যদ্রব্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বছরের শেষ দিকে এ মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে।

লেবাননের মানুষ খাদ্যের জন্য বেশিরভাগ সময়েই আমদানির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতেও চরম সংকটে পড়তে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লেবানিজ গবেষক সামির আসমার বলেন, লেবানিজরা ক্লান্ত। তারা খারাপ সংবাদ শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।

সরকারের দুর্নীতির কারণে লেবানিজদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দেশটির বিদ্যুৎখাতে কোনো উন্নতিই নেই। গড়ে প্রতিদিন একজন লেবানিজকে ২০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে থাকতে হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ আছে এমন যেকোনো দেশের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি।