হিন্দুস্তান টাইমস: বাংলাদেশে ফিরছে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ

চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। তারপরও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে খুব একটা দেখা মিলছে না এ মাছের। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে পলি জমা ও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেখানে দেখা মিলছে না রুপালী ইলিশের। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের।

রুপালী ইলিশ- ফাইল ছবি

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন লকডাউন জারি থাকায় এ বছর পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে দূষণের মাত্রা ছিলো কম। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে সাগর ও নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞাও যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছিলো, এ বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। কিন্তু ভরা মৌসুম চললেও দেখা মিলছে না ইলিশের। অথচ ওপার বাংলায় (বাংলাদেশ) ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের এক মৎস কর্মকর্তা গণমাধ্যমটিকে বলেন, প্রতি বছর এ সময় পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ২০-২৫ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়ে। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ প্রজননের জন্য সাগর থেকে নদীতে আসে। তখন সবচেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভালো থাকা সত্ত্বেও মাত্র ১০০ টন ইলিশ ধরা পড়েছে। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

পশ্চিবঙ্গের মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা প্রদীপ চ্যাটার্জী বলেন, এবার পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে ইলিশ মিলছে না বললেই চলে। এমনও হতে পারে যে, মাছ সাগর থেকে নদীতে আসছে। কিন্তু নদীতে বিভিন্ন ধরনের বাঁধার সম্মুখিন হয়ে গতিপথ বদলে বাংলাদেশ চলে যাচ্ছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, মাছের প্রজনন নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাগর ও নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এ বছর তা যথাযথভাবে পালন করা হয়। পাশপাশি লকডাউনের কারণে নিজ থেকেই জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখেছিলো। এছাড়া বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ভালো ছিলো। তাই ধারণা করা হয়েছিলো, এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়া যাবে। কিন্তু মাছ ধরা শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত খুবই কম পরিমাণে ছোট ইলিশ পাওয়া গেছে।

এর কারণ হিসেবে সেন্ট্রাল ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নদী–মৎস্য বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ও ইলিশ বিশেষজ্ঞ উৎপল ভৌমিক বলেন, ইলিশের ক্ষেত্রে সাধারণত স্রোতের অভিমুখে যাওয়ার জন্য নদীতে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ ফুট গভীরতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত ও পলি জমার কারণে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোর গভীরতা ২০ থেকে ৩০ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যখন বৃষ্টি হয় তখন গভীরতা বড়োজোর ৫০ থেকে ৬০ ফুট হয়। কিন্তু এতে ইলিশ আসতে পারে না। নদীতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য দিকে চলে যায়।