তুরস্ক-ইউরোপ বরফ গলার আভাস

সাম্প্রতিক সময়ে ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। ককেসাসসহ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে ফ্রান্সের ব্যাপক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ইউরোপীয় দেশ দুটির সঙ্গে সেই উত্তেজনা-দ্বন্দ্ব অবসানের আভাস মিলেছে অতি সম্প্রতি।

গ্রিক প্রধানমন্ত্রী মিতসোতাকিস, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁন

জার্মানির ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, গত ৫ বছর ধরে তুরস্ক-গ্রিস আলোচনায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই আগামী সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দেশ দুটি।

দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে তুঙ্গে ওঠার পর ইতিবাচক মনোভাবের আভাস দিয়েছে আঙ্কারা ও এথেন্স। দু’পক্ষের কূটনীতিকদের কথায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে দ্বন্দ্ব কাটার সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে।

বৈঠক নিয়ে গ্রিসের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোস ডেনডিয়াস। নিজ দেশের গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আশা প্রকাশ করেন, একই মনোভাব দেখাবে তুরস্কও।

মিতসোতাকিস ও এরদোয়ান

এদিকে, বিতর্কিত পানিসীমানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে আলোচনার পথ প্রশস্ত করেছে তুরস্ক। গত সপ্তাহে বেলজিয়াম সফরে গিয়ে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু জানান, মাসদুয়েকের মধ্যে ভূমধ্যসাগর নিয়ে সাইপ্রাসের সঙ্গেও বৈঠক হবে।

এটিকে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে ‘ইতিবাচক পরিবেশ’ বজায় রাখার মিশন বলে বর্ণনা করেছেন মেভলুত।

খবরে আরো বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ পেলেও আরো কিছু বিষয়ে দ্বন্দ্ব নিরসন সহজ হবে না। এর মধ্যে রয়েছে শরণার্থী সংকট, মানবাধিকার ও সামরিক হস্তক্ষেপের মতো বিষয়।

ইইউর পতাকা

তুরস্ক-গ্রিসের সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল রয়টার্সকে জানান, তিনি একটি ‘সম্ভাবনার দ্বার’ দেখতে পাচ্ছেন। এ জন্য আঙ্কারাকে বিরোধ এড়িয়ে আলোচনার পথে হাঁটতে হবে।

অন্যদিকে, সোমালিয়া থেকে সুদান, কাতার থেকে আজারবাইজান, লিবিয়া থেকে পাকিস্তান- সর্বত্রই তুর্কি প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়িয়েছে তুরস্ক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামরিক উপস্থিতিও জাহির করেছে এরদোয়ানের দেশ।

এ নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে ফ্রান্সের উত্তজনা চরমে পৌঁছায় সম্প্রতি। আঙ্কারার ওপর অবরোধ আরোপ করতে ইইউকে চাপ দেয় প্যারিস-এথেন্সসহ কয়কেটি দেশ। তবে তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সুর নরম করে তারা।

এরদোয়ান ও ম্যাক্রোন

কয়েকদিন আগে আঙ্কারা-এথেন্সের মধ্যকার উত্তেজনা প্রসমনের ইঙ্গিত মিলেছে। বাকযুদ্ধে জড়ানো তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ নিজেদের মধ্যে চিঠি চালাচালিও করেছেন।

ডয়চে ভেলে বলছে, এসব বিষয় নিয়ে আগামী মার্চ মাসে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক বদলের সূচনা হতে পারে।