ইউক্রেনের পাশে এরদোয়ান, রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং তুরস্কের সম্পর্কে বড়সড় ছেদ পড়তে যাচ্ছে। রুশ-মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন-রাশিয়া এখন যুদ্ধের মুখোমুখি। রাশিয়া ইউক্রেন-সীমান্তে বিপুল অস্ত্রসহ সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। এ ইস্যুতে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

এ প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার বিরুদ্ধে তুরস্ককে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে রাশিয়া। যখন ডনবাস এলাকায় ইউক্রেন সরকার নতুন করে সামরিক অভিযান চালাতে পারে বলে জোরালো জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এ হুঁশিয়ারি দিল রাশিয়া।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তুরস্ককে এবং ইউক্রেন ইস্যুতে জড়িত বিচ্ছিন্নতাবাদী-বিরোধী সব দেশকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।

মিসরের রাজধানী কায়রো সফরের সময় ল্যাভরভ এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর কয়েকদিন আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইস্তাম্বুল সফর করেন। এ সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশকে আহ্বান জানায় রাশিয়া। এমন এক সময় এ আহ্বান এসেছে, যখন উত্তর ইউক্রেনে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, তুরস্কসহ যেসব দেশের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি, তাদেরকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। তারা যাতে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত যুদ্ধংদেহী বিবৃতিগুলো পর্যালোচনা করেন। এ সামরিক আকাঙ্ক্ষাকে উৎসাহিত করা বন্ধ করতে তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে।

ইউক্রেনকে সামরিক ড্রোন সরবরাহ করেছে তুরস্ক। ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। অর্ধেকের মতো ড্রোন এরইমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গোলাবারুদ, টহল নৌকা নির্মাণসহ যুদ্ধ ড্রোন সরবরাহে তুরস্কের সঙ্গে আরও চুক্তি হয়েছে গত ডিসেম্বরে।

কৃষ্ণসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনেরও সমালোচনা করেন ল্যাভরভ। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কী চায়, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না বলে তিনি দাবি করেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তুরস্কের সঙ্গে তার দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের দশম বার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি ইস্তাম্বুল সফর করেন। ডনবাসে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা যুদ্ধাবস্থায় রূপ নেওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি তুরস্কের সহায়তা চান।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধারের জন্য তুরস্কের সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তুর্কি নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কি টুইট করেন, ‘আমরা মানবজীবন রক্ষা, অন্যান্য সহায়তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তুরস্কের সঙ্গে অভিন্ন মূল্যবোধ ভাগাভাগি করি।’

এ সফর ছিল ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় তুরস্ক সফর।

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক আজকের নয়। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে ইউক্রেন এবং তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রথমেই যেসব দেশ ইউক্রেনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তুরস্ক তাদের অন্যতম।

আঙ্কারাতে ইউক্রেনের স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে। এর পাশাপাশি ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের কনস্যুলেট জেনারেল রয়েছে। অপরদিকে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে তুরস্কের স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে। একইসঙ্গে, ওদেসাতে কনস্যুলেট জেনারেল রয়েছে।

২০১৫ সালের শেষ দিকে এসে দুই দেশের সঙ্গেই রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর জেরে ইউক্রেন এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটে। ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকের পর এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল এবং তা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তকরণকে সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, তুরস্ক ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবেই মনে করে এবং ক্রিমিয়াকে নিজেদের বলে রাশিয়া যে দাবি করছে, তুরস্ক তাতে স্বীকৃতি দেবে না।

খবরে বলা হয়, মার্চের শেষ নাগাদ সীমান্তে প্রায় ২০ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে রাশিয়ার ট্রেন। বিশেষ করে ক্রিমিয়া, বোরোনোঝ ও রোস্তভ অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

দেশটি সীমান্তে কৌশলগত ‘ইস্কান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে বলে কোনো কোনো গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। বোরোনোঝ অঞ্চলে এ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়। ইস্কান্দার এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা দিয়ে শত্রুসেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি ভূমিতে অবস্থিত শত্রুবাহিনীর রাডার ব্যবস্থায় হামলা করা যায়।