ইসরায়েলকে কোণঠাসা করতেই বড় পদক্ষেপ নিল তুরস্ক!

দীর্ঘ ৮ বছর পরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিয়েছে মিশর ও তুরস্ক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টি ‘তুরস্ক-মিশর পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা সংসদ অনুমোদন দিয়েছে।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে আইন প্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে মিশর ছাড়াও লিবিয়ার সাথে একই ধরনের ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় বলে খবর দিয়েছে আনাদুলু এজেন্সি।

আগামী মাসে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারুক কায়মাকসির নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল কায়রো সফর করার আগেই এ সিদ্ধান্ত নিল আঙ্কারা। এর ফলে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভাসোগলুর নেতৃত্ব আগামী সপ্তাহেই একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে গিয়ে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবে।

২০১৩ সালে মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসিকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই প্রথম দেশটির সাথে পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠনের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন আরও এক ধাপ এগুলো।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহীম কালিন বলেন, ‘মিশরের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে এ অঞ্চলে লিবিয়ায় যে যুদ্ধ চলছে, তাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সাথে মিশর ও গালফ অঞ্চল আরব বিশ্ব থেকে আঙ্কারাকে যে একেঘরে করে রেখেছিল, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’

মিশরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল তুরস্ক। এজন্য সবকিছু ঠিক করতে আঙ্কারাকেই আগ বাড়িয়ে আসতে হবে। আর সে কাজটি করে এরদোয়ানের সরকার সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিশরের সাথে এ সম্পর্ক উন্নয়নকে তুরস্ক এ অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ মিশরের সাথে তুরস্কের একটি শক্তিশালী সম্পর্কের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরে গ্রিস, সাইপ্রাস ও ইসরায়েলকে আরও কোণঠাসা করা সম্ভব হবে। সে পথেই এগাচ্ছে এরদোয়ান।

আঙ্কারা চাইছে, খুব শিগগিরই মিশরের সাথে একটি জলসীমা চুক্তি করতে। এতে ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোনের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। ভূমধ্যসাগরের বৃহৎ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে আঙ্কারা। একই সাথে সাগরটি থেকে আরও বেশি তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ২০১৩ সালে মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে তুরস্ক সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময় মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়ে টানা বিক্ষোভরত ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের উচ্ছেদে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

এ ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক এমন তিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যে, কায়রো ও আঙ্কারা উভয়ই তাদের রাষ্ট্রদূতদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর দীর্ঘদিনেও সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি বরং লিবীয় যুদ্ধ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয়সহ আঞ্চলিক বিরোধ-সংঘাতে মিসর ও তুরস্ক পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে আসছে।

তবে গত মাসে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বৈঠক করেন। এরপর থেকেই সম্পর্কের বরফ গলাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্যের দুই মুসলিম দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থায়ী শান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে কায়রো ও আঙ্কারা। বাস্তবে এ সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হলে আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।