আপনি পড়ছেন

মিয়ানমারের চলমান সংকট সমাধানে আসিয়ান ব্যর্থ হয়েছে। এরপর থেকে দেশটির পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ এখন ‘সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশটিকে।

cdm training exlarge 2

সিএনএন বলছে, জান্তার পতনে বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীগুলোর সাথে বিক্ষোভকারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখন তাদের অধীনে গভীর জঙ্গলে ক্যাম্প করে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। এসব প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে দেশটির বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সাথে চিকিৎসকরাও রয়েছেন। ফলে অচিরেই মিয়ানমারজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের আশঙ্কা বাড়ছে।

এরইমধ্যে বুধবার (৫ মে) মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার ‘জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে জান্তাবিরোধী সরকার বলেছে, সেনাবাহিনীর হামলা ও সংঘাত থেকে সমর্থকদের রক্ষার জন্য এ বাহিনী গড়ে তোলা হবে। আর এটি ফেডারেল ইউনিয়ন আর্মি গঠনের পূর্বঘোষণার বাস্তবায়ন এবং দেশটির ৭০ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

মিয়ানমারের জঙ্গলে একটি ছোট্ট গ্রাম। সেখানে অস্ত্র হাতে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন একদল তরুণ। মুখ ঢেকে তারা সামরিক শব্দে লক্ষ্য ঠিক করছেন। সামরিক প্রশিক্ষণের এ চিত্র অতিরঞ্জিত মনে হলেও পরের পর্বে তারা সত্যিকার অর্থেই জান্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সাং সু চির গণতান্ত্রিক সরকার সরিয়ে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ হচ্ছে মিয়ানমারে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী চড়াও অবস্থানে থাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু এবং সাড়ে চার হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছে।

cdm training exlarge h

নিজেকে রক্ষায় অনেক বিক্ষোভকারী পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে যেমন সাধারণ নাগরিক রয়েছেন, তেমনি হাজারো সরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, চিকিৎসক, শিক্ষক ও প্রকৌশলী রয়েছেন। সেখানেই তারা খুঁজে নেন দীর্ঘদিন সায়ত্তশাসনের দাবিতে বিদ্রোহ করে আসা সশস্ত্র আদিবাসীদের। এসব বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে রয়েছে।

এখন এসব বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর (তাতমাদো) আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার উপায় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

মিয়ানমারের সবচেয়ে পুরনো বিদ্রোহী গ্রুপের একটি কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। সংগঠনটির সামরিক শাখা কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের (কেএনডিও) ৭০ বছর বয়সী চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল নেরদা বো মায়া জানান, তারা দক্ষিণাঞ্চলের কারেন রাজ্যের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন।

cdm training exlarge

নেরদা কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘জীবন রক্ষার জন্যই এ প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণ না দিলে কে তাদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে?’ তিনি জানান, তার কাছে অন্তত জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২০০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, যারা জীবনে কখনো অস্ত্র ধরেনি। এরা বয়সে তরুণ, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন।

প্রশিক্ষণে অস্ত্র ধরা, গুলি ছোড়া, শারীরিক মুভমেন্টের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা ও দল বেঁধে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার বিষয়ে হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন, জনগণের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের জন্য তারা লড়ছেন।

ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র দুই তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যক্তিরা যে কিছুই করতে পারবে না, তা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জানে। কিন্তু নেরদা বলছেন, ‘হয়তো কিছুই হবে না। কিন্তু এরা যে মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে শহরে ফিরবে, তাই বা কম কিসে। বর্মি সেনাদের বিরুদ্ধে তো রাস্তায় যুদ্ধ করার দরকার নেই। এসব তরুণ আরও কিছু করতে পারে, আরও প্রতিরক্ষা ও উৎপাদনমূলক কিছু করে দেখাতে পারে।’ কিন্তু আরও কিছু কী, তার ব্যাখ্যা দিতে রাজি হননি তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ প্রশিক্ষণের বিষয়ে জান্তা সরকারের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য সরকারের ‘জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনীর’ মূল হাতিয়ার হবে এসব তরুণ। তারা শহরে ফিরে এসে আরও মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে উদ্বুব্ধ করবেন। তখন জান্তা কীভাবে এদের সামাল দেয়, তার ওপর নির্ভর করছে মিয়ানমারের ভবিষ্যত।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.