৮ বছর পর এক টেবিলে, ভুল কী ভাঙবে?

দীর্ঘ আট বছর পর এক টেবিলে বসেছে তুরস্ক ও মিশর। বুধবার (৫ মে) কায়রোতে দুই দিনব্যাপী ‘ভুল সংশোধনে’ দেশ দুটির কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। আরব নিউজ বলছে, বৈঠকে প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরবেন, যা সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে ভূমিকা রাখবে।

৮ বছর পর এক টেবিলে, ভুল কী ভাঙবে?

আলোচনা শুরুর আগে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আত্মসমালোচনার’ এ বৈঠকে কায়রোর পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামদি লোজা। অন্যদিকে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেদাত ওনাল তার দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈঠকে আঞ্চলিকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরে গ্যাস, বিতর্কিত সমুদ্রসীমা ও লিবিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা হবে। মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতে উভয় দেশ নিরাপত্তা সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তুরস্কে অবস্থান নেওয়া সংগঠনটির বেশ কয়েকজন ‘অপরাধীকে’ ফেরত চাইতে পারে কায়রো। তুরস্কের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিশরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাও তুলে ধরবে কায়রো।

গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক সম্পর্ক স্বাভাবিকে মিশরের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। একই সাথে আঙ্কারায় যেসব গণমাধ্যমে কায়রোবিরোধী প্রপাগান্ডা হতো, তাও স্থগিত করা হয়।

তুরস্কের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে তারা বাণিজ্য, জ্বালানি সহায়তা ছাড়াও ভূমধ্যসাগরে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিয়ে আলোচনা করবেন। রাজনৈতিক বাধা দূর হলে দুদেশের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তুরস্ক এবং মিশর এ অঞ্চলের শক্তিধর দেশ। সমঝোতা হলে এ অঞ্চলের অনেক এলাকায় কায়রো ও আঙ্কারা একসাথে কাজ করতে পারবে বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালে মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সরিয়ে আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতার দখল নিলে দেশটির সঙ্গে তুরস্ক সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময় মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়ে টানা বিক্ষোভরত ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের উচ্ছেদে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

৮ বছর পর এক টেবিলে, ভুল কী ভাঙবে?

এ ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক এমন তিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যে, কায়রো ও আঙ্কারা উভয়ই তাদের রাষ্ট্রদূতদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর দীর্ঘদিনেও সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি বরং লিবীয় যুদ্ধ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয়সহ আঞ্চলিক বিরোধ-সংঘাতে মিশর ও তুরস্ক পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের চাপে রয়েছে আঙ্কারা ও কায়রো। ফলে উভয় দেশ নিজেদের মধ্যকার ভুল সংশোধনে উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে একই কারণে কাতারের সাথেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করে কায়রো।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদুল খালেক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যত শক্তিধরই হোক না কেন, এককভাবে কখনো আঞ্চলিক ইস্যুতে সফল হওয়া যায় না, এটি মিশরের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। ফলে সম্পর্ক স্বাভাবিকে বৈঠক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সত্যিই কায়রোর ভাগ্যে কী ঘটবে, তা এখনই বলা কঠিন।’