আপনি পড়ছেন

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। যে হারে ভাইরাসটি মানুষকে সংক্রমিত করছে, সে তুলনায় প্রতিরোধী টিকার উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর বড় কারণ টিকা উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক মোড়ল রাষ্ট্রগুলো। এ সংকট মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলো টিকার পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্তের দাবি জানিয়েছিল আসছিল।

vaccine h

নাটকীয়ভাবে গত বুধবার (৫ মে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মেধাস্বত্ত্ব উন্মুক্তে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের ঘোষণা দেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডাক আসে, তাতে সাড়া দিতে হয়। তবে এই মুহূর্তে এই উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না। এই বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলোর সময়ের প্রয়োজন হবে।’

ইতোমধ্যে বাইডেনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস এক টুইটে বলেছেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।’

বিবিসি বলছে, মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের এই পদক্ষেপ অনুমোদিত হলে টিকার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সুলভমূল্যে সরবরাহ করা যাবে। কিন্তু ওষুধ প্রস্ততকারক কোম্পানিগুলোর যুক্তি, এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল নাও মিলতে পারে। বিল গেটস যেমন কয়েক দিন আগে বলেন, পেটেন্ট উন্মুক্ত করলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেনামি কোম্পানি যাচ্ছেতাইভাবে টিকা তৈরিতে নামতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হবে।

মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারি মোকাবেলায় শীর্ষ ভূমিকায় চলে এসেছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, ইস্যুটি নিয়ে যেভাবে মোড়ল রাষ্ট্রগুলো পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রত্যাশার সামান্যই পূরণ হতে পারে। জেনেভায় ডব্লিউটিওতে চলমান মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের আলোচনায় জড়িত এক কূটনীতিক বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিঃসেন্দহে যুক্তরাষ্ট্র গেম চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু তাদের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।’

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের প্রস্তাব ইতোমধ্যে জায়ান্ট ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে। তারা বলছে, টিকার উৎপাদন বৃদ্ধিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু পেটেন্ট স্বাধীন হলে উদ্ভাবন প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।

যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ এখন নাটকীয়ভাবে অন্যান্য দেশগুলোর ওপর একটি চুক্তিতে পৌঁছতে চাপ তৈরি করেছে। সুইজারল্যান্ডের ইপিএফএল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাস্বত্ত্ব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ গেতান ডি রাসেনফোনি বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য এ সিদ্ধান্ত অনুঘটক হতে পারে। এ ময়দানে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় খেলোয়াড়। তবে অন্যান্য দেশগুলো প্রস্তাবে সমর্থন দিলেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চাইবে।’

vaccine 2

যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদিও আগে থেকে তারা এর বিরোধিতা করে আসছিল। প্যারিসের নর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক সামিরা গুয়েনিফ বলেন, ‘বাইডেন যে পথে চলা শুরু করেছেন, বাকিদের সামনে আসলে তার বিপরীতে বা বিকল্প পথ নেই।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৬৪ সদস্য দেশ এ বিষয়ে একমত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে সামিরার মতে, কিছুটা সময় লাগলেও সবাই যে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি অনুধাবন করছেন, এটিই যথেষ্ট। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একমাত্র রাজনৈতিক চাপেই প্রস্তাব আলোর মুখ দেখতে পারে। আর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণকে এ ইস্যুতে চাপ বাড়াতে হবে। তারা এটি যত দ্রুত করতে পারবে, তত দ্রুত টিকাপ্রাপ্তি সহজ হবে বলে মনে করেন রাসেনফোনি।

করোনা মহামারি মোকাবেলায় টিকাসহ জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোর পেটেন্ট উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে গত অক্টোবরে ডব্লিউটিওতে প্রস্তাব উত্থাপন করে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ পর্যন্ত তাদের ওই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১০০টির বেশি দেশ। শুরু থেকে পেটেন্ট উন্মুক্তের প্রস্তাবে তীব্র বিরোধিতা করে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের সঙ্গে একমত জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যের মতো অন্য ধনী দেশ। বাইডেন ক্ষমতায় এসে পেটেন্ট উন্মুক্তে ঘোষণা দেওয়ায় বাকিরাও নড়েচড়ে বসেছে।

তবে এখনো জার্মানি আগের অবস্থানেই রয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য মেধাস্বত্ত্ব রক্ষা করা আবশ্যক এবং সেটি অবশ্যই সেভাবে থাকা উচিত। উৎপাদন সক্ষমতা ও উচ্চমাত্রার মান নিশ্চিত করতে গিয়েই টিকার উৎপাদন কম হচ্ছে। এর সঙ্গে পেটেন্ট উন্মুক্ত করার কোনো সম্পর্ক নেই।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.