আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেসন লিলি। ইরাকেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে লড়েছেন। কিন্তু দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ এ লড়াইয়ে তিনি খুবই বিরক্ত, ক্লান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা ফেরতের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, এ যুদ্ধে আমাদের অনেক সেনা মারা গেছে, কিন্তু পরিস্থিতিই এমন যে, লড়াইয়ে আমাদের জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এ অবস্থা তার দেশ ও নিজের জীবন নিয়ে তাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
জেসন লিলি
৪১ বছর বয়সী লিলি বলেন, এ যুদ্ধে আমরা শতভাগ হেরেছি। পুরো ব্যাপারটা ছিল তালেবানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, কিন্তু আমরা তা করতে পারেনি। বরং তালেবানই ভবিষ্যতে আবার দেশের শাসনকর্তৃত্ব করায়ত্ত করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন, আফগানিস্তানের লোকদেরই তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সে যুদ্ধে জড়িয়ে আরেকটি প্রজন্মকে কুরবানি দেয়া সম্ভব নয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা, ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, আল কায়েদা নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালিয়েছিল। এরপর সেখানে ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ দীর্ঘ সময়ে তাদের প্রাপ্তি তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় হারিয়েছে নিজেদের ও মিত্রদের সাড়ে তিন হাজার সেনা। এ সময়ে বেসামরিক আফগান মারা গেছে ৪৭ হাজার। আফগান সেনা মারা গেছে কমপক্ষে ৬৬ হাজার। আর এ সময়ে ২৭ লাখের বেশি লোক আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইরাক ও আফগানিস্তানে ১৬ বছর ধরে লড়াই করা লিলি এক সাক্ষাতকারে বলেন, এটাই কি চরম বিপর্যয়? এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। কিন্তু আফগানিস্তানে যে বিশ্বাসে মার্কিন সেনা পাঠানো হয়েছিল যে, তারা শত্রুদের পরাজিত করবে, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে এবং আফগানিস্তানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মার্কিন প্রশাসন এ বিষয়গুলোতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে।
লিলি এবং তার মতো আরো অনেক যোদ্ধা আফগানিস্তানের লড়াইকে ভিয়েতনামের যুদ্ধের সাথে তুলনা করে। তাদের মতে উভয় যুদ্ধেই লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসব যুদ্ধের সময় দেশের দায়িত্ব পালন করলেও এ অবস্থার ভিন্নতা হয়নি।
আফগানিস্তানে অবস্থানকালে লিলি বলেন, আফগানিস্তানকে বলা হয় ‘সাম্রাজ্যবাদের কবরখানা’ । ব্রিটেন দুইবার আফগানিস্তানে হামলা চালায়। শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয় স্বীকার করে তারা দেশটি থেকে সরে আসে। ১৯৭৯ সাল থেকে দশ বছর আফগানিস্তানকে দখলে রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরে ১৫ হাজার সেনার মৃত্যু এবং হাজার হাজার সেনাকে আহত অবস্থায় রেখে তারা দেশটি ছেড়ে পালিয়ে আসে।
লিলি বলেন, তার চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে একজন তালেবান বন্দির কথায়। তিনি তাকে বলেছিলেন, তালেবান কেবল ধৈর্য ধরে আছে। তারা জানে, সোভিয়েতরা যেমন পালিয়েছিল, মার্কিনিরাও পালাবে। ২০০৯ সালে সে এ কথা বলেছিল। এখন ২০২১ সালে বসে উপলব্ধি করছি, সে-ই সঠিক ছিল।