কে এই মুহাম্মদ আমির, ইসলাম গ্রহণের নেপথ্যে
- Details
- by মাহফুজ সাদি
ভারতের অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙায় অংশ নেয়া উগ্র হিন্দুত্ববাদী যুবকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বলবির সিং। পরবর্তীতে অনুশোচনা ও অপরাধবোধের কারণে বিবেকের তাড়নায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম ধারণ করেন মুহাম্মদ আমির। দেশটির হায়দারাবাদের তেলাঙ্গানার ভাড়া বাসায় সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছে এই নওমুসলিমের, ঘটনাটির তদন্তে নেমেছে রাজ্য পুলিশ।
কে এই মুহাম্মদ আমির? ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার ওই মসজিদের মিনারে উঠে শাবল চালানো বলবির সিং ছিলেন শিবসেনার সক্রিয় কর্মী। ওই ঘটনার পর নিজের সবকিছু খুইয়েছিলেন তিনি। এমন ঘৃণ্য ঘটনার পর তাকে তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন। স্ত্রীও তার কাছে থাকেননি। তার বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে শুনেন, ‘বাবা নাকি বলে গেছেন- বলবির যেন নিজের মুখ বাড়ির কাউকে না দেখান। এমনকি, বলবির যেন তার বাবার মুখাগ্নিও না করেন।’
এরপর পরিবারের সঙ্গ ছেড়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহ ও নবী রাসুলের প্রেমে পড়েন। বলবির সব সময় আল্লাহর নাম জপতেন, আদায় করতেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। জানা যায়, বলবিরের পরিবার কোনো দিনই উগ্র হিন্দু ছিলো না। বলবির নিজে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি মা, বাবা, ভাই, বোনদের সাথে থাকতেন পানিপথের কাছের একটা গ্রামে। বলবিরের বয়স ১০ হলে তার বাবা ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য পানিপথে বসবাস শুরু করেন।
১৯৯৩ সাল থেকে গত ২৭ বছরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়া ৯১টি মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ চলে আরো ৫৯টি মসজিদের। ১৯৯৭ সালে হারিয়ানায় প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে মদিনা’ নির্মাণ করেন আমৃত্যু আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করা বলবির।
যে কারণে ইসলাম গ্রহণ করেন: ইসলাম গ্রহণের পর ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে সাক্ষাৎকার ছাড়া হয় বলবির সিং তথা মুহাম্মদ আমিরের। তাতে ধর্মান্তরিত হওয়ার পেছনের পুরো ঘটনা বিস্তারিত প্রকাশ করেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ আমির বলেন, ‘আমার বাবা গাঁধিবাদ অর্থাৎ মহাত্মা গাঁধির দেখানো তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। দেশভাগের সময়কার পরিস্থিতি তিনি দেখেছিলেন। আমাদের বাড়ির আশেপাশের মুসলমানদের তিনি আগলে রাখতেন। তবে পানিপথের পরিবেশটা সেরকম নয়, হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা লোকজন এখানে তেমন মর্যাদা পেতেন না। মুসলমানদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো।’
বলবির বলেন, ‘পড়াশোনার একপর্যায়ে শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করি। পরে এমএ শেষ করি রোহতকের মহর্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখন প্রতিবেশীরা ভাবতেন আমি একজন কট্টর হিন্দু। এদিকে, আমার বাবা মূর্তি পূজায় কোনরকম বিশ্বাসী ছিলেন না। কখনোই যেতাম না মন্দিরে। বাড়িতে গীতা থাকলেও কখনো খুলে দেখা হয়নি।’
বাবরি মসজিদ ভাঙার সেই ঘৃণিত কাজ সম্পর্কে বলবির বলেন, ‘শিবসেনার লোকজন আমাকে সম্মান করতো। শিবসেনাই আমাকে ও বন্ধু যোগেন্দ্রকে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিল বাবরি ভাঙতে। এরপর বাবরি ভেঙে পানিপথে ফেরার পথে আমাকে ও যোগেন্দ্রকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয়। আমরা বাবরির যে দুটি ইট এনেছিলাম সেগুলো পানিপথে শিবসেনার স্থানীয় অফিসে স্থান পায়।’
বলবির আরো বলেন, ‘বাবরি ভাঙার পর বাড়িতে ঢুকতেই চেঁচিয়ে উঠেন বাবা দৌলতরাম। বাবা বললেন, হয় তুই এই বাড়িতে থাকবি, না হলে আমি থাকবো। অগ্যতা বের হয়ে গেলাম কিন্তু আমার স্ত্রীও সেদিন আমার হাত ধরে বেরিয়ে এল না। এরপর কিছুদিন ভবঘুরে হয়ে দিন কাটে। লম্বা দাড়ি দেখে অনেকেই ভয়ে আঁতকে উঠতেন। পরে বাড়িতে ফিরে জানতে পারি, বাবা আর নেই। আমি বাবরি ভাঙার দুঃখেই নাকি মারা যান তিনি।’
মুসলমান হওয়ার গল্পটি জানতে চাইলে বলবির বলেন, ‘বাবা হারিয়ে পুরনো বন্ধু যোগেন্দ্রের কাছে যাই। জানতে পারি, যোগেন্দ্র মুসলিম হয়ে গেছে। যোগেন্দ্র জানায়, বাবরি মসজিদ ভাঙার পর মাথা বিগড়ে (পাগল) যায়। পাপ করেছি বলেই এমনটা হয়েছে ধারণা থেকে মুসলিম হয় সে। যোগেন্দ্রর কাহিনী শুনে দেরি না করে সোনেপতে গিয়ে মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নেই। মাওলানা কালিম সিদ্দিকির হাত ধরে হয়ে যাই মুহাম্মদ আমির।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.