আপনি পড়ছেন

আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে তালেবান। ঘানি সরকার না ভেঙ্গে দিলে তালেবান শান্তি প্রক্রিয়ায় শামিল হবে না। বার্তা সংস্থা এপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহীন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি তালেবানের সমঝোতা টিমেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

suhail shaheen talibanসোহাইল শাহীন

গত কয়েক সপ্তাহে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বর্ডার ক্রসিং দখল করেছে তালেবান। তারা একটি প্রাদেশিক রাজধানী দখলেরও দ্বারপ্রান্তে। এ সপ্তাহে মার্কিন জেনারেল মার্ক মিলি পেন্টাগনে এক বক্তব্যে স্বীকার করেছেন, তালেবান কৌশলগত অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ আফগান দখল করতে না পারলেও এ যুদ্ধ খেলা অতি তাড়াতাড়ি শেষ হবে না।

২০ বছর আগের তালেবান শাসনের কথা মনে করে আফগানিস্তানের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে বলে মনে করছে তালেবানবিরোধিরা। হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য ভিসার আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনাদের ৯৫ ভাগ আফগান ছেড়েছে। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব সৈন্য আফগান ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

afgan taliban control district

সোহাইল শাহীন বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে যখন একটি গ্রহণযোগ্য সরকার কায়েম হবে তখনই কেবল তালেবান অস্ত্র ত্যাগ করবে। সেই সরকারকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এজন্য অবশ্যই ঘানির সরকারকে বিলুপ্ত করতে হবে।

শাহীন বলেন, 'আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই, দেশের ক্ষমতায় আমরা কারও একচেটিয়া আধিপত্যে বিশ্বাস করি না। অতীতে যে সরকারই একচেটিয়া আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করেছে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তালেবান ক্ষমতায় এলে আগের পদ্ধতি অনুসরণ করবে না। আবার ঘানি সরকারের সঙ্গেও সমঝোতায় আসবে না। কারণ ঘানি একজন যুদ্ধবাজ নেতা।

afgan taliban

আফগানিস্তানে ঘানি সরকারের বৈধতা নাকচ করে দিয়ে শাহীন বলেন, ২০১৯ সালের যে নির্বাচনে ঘানি ক্ষমতায় এসেছে তা ছিল প্রতারণামূলক নির্বাচন। ভোটের পর ঘানি ও বিরোধী নেতা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ দুজনেই বিজয়ী দাবি করে নিজেদেরকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। সমঝোতা করে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এখন ঘানি সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন। এখন তাকে সমঝোতা কাউন্সিলের প্রধান করা হয়েছে।

এদিকে ঘানি আগামী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তালেবান ছাড়াও তার সমালোচকরা মনে করে, ঘানি ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন যেটি সরকার সমর্থকদের মধ্যেও একাংশ চায় না।

চলতি মাসে কাতারের দোহায় সরকার ও তালেবানের মধ্যে সংলাপ হয়। দেশে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আরও বৈঠকে বসার প্রস্তাব গৃহীত হয়। জনগণের জান-মাল রক্ষায় দুই পক্ষই শান্তি ফেরাতে রাজি হয়। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেনি। যুদ্ধবিরতির চুক্তিও হয়নি।

যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহীন বলছেন, সংলাপের শুরুটা ভালো হয়েছিল। ঘানি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই তারা তালেবানকে আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানায়। কিন্তু তালেবান তো এতে রাজি হতে পারে না। ফলে ওই সংলাপ ভেস্তে যায়। শাহীন বলেন, যুদ্ধবিরতি তখনই হবে যখন ঘানি সরকার বিলুপ্ত করা হবে। আমাদের ও জনগণের নতুন সরকার গঠন হলে তালেবান অস্ত্র ফেলে দেবে। কোনো যুদ্ধ থাকবে না।

শাহীন বলছেন, তালেবান ক্ষমতায় এলে অবশ্যই নারীরা তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পাবে। তারা স্কুলে যাবে, রাজনীতি করবে। কিন্তু তাদের হিজাব কিংবা হেডস্কার্ফ পরেই সবকিছু করতে হবে।নারীদের বাইরে বেরোতে হলে পুরুষ সঙ্গে নিয়ে বেরোতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তালেবান যেসব এলাকায় প্রশাসন চালাচ্ছে, সেসব এলাকার স্কুল কলেজ সবই আগের মতো চলছে।

নারী ও বালিকারা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো করে চলাফেরা করছে। তালেবানের কিছু কর্মী নেতাদের অবাধ্য হয়ে নারীর প্রতি কিংবা জনগণের প্রতি সহিংস আচরণ করতে পারে। তাদের ধরে বিচার করা হচ্ছে বলে জানান শাহীন। তালেবানের বিরুদ্ধে যেসব ভিডিও দেখানো হচ্ছে তার অধিকাংশই ভুয়া।

তালেবান মুখপাত্র বলছেন, রাজধানী কাবুল দখল করার ইচ্ছা তালেবানের নেই। প্রাদেশিক রাজধানী দখলের প্রশ্নই আসে না। তবে তাদের হাতে যে অস্ত্র-সরঞ্জাম রয়েছে তা দিয়ে যে কোনো নতুন অঞ্চল দখল করা সম্ভব। তার দাবি, তালেবান বেশিরভাগ অঞ্চল সমঝোতার মাধ্যমে দখল করেছে, যুদ্ধে মাধ্যমে নয়। মাত্র ৮ সপ্তাহের মধ্যে ১৯৪ জেলা যুদ্ধের মাধ্যমে তালেবান দখল করেনি।

যেসব জেলায় বিদেশি সৈন্যরা অবস্থান করছিল, সেসব এলাকার লোকজন নিজেরাই তালেবানকে স্বাগত জানিয়েছে। শাহীন বলছেন, কেউই যুদ্ধ চায় না, আমিও চাই না। আমাদের যারা ভয় করে তাদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে চাই।

ওয়াশিংটন হাজার হাজার মার্কিন সামরিক দোভাষীকে স্থানান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ব্যাপারে শাহীন বলছেন, তাদের কোনো ভয় নেই। তালেবান তাদের হুমকি দিচ্ছে না। আফগানিস্তান গরিব বলে তারা দেশে থাকতে চাচ্ছে না, এটাই মূল কারণ। শাহীনের বক্তব্য, তালেবান সাংবাদিক কিংবা সিভিল সোসাইটির প্রতি ক্ষিপ্ত নয়। বিদেশি সাংবাদিকরাও তালেবানের সঙ্গে নির্ভয়ে কাজ করতে পারবে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.