আফগানিস্তানে সহযোগিতা জোরদারে ৪ দেশের ঐকমত্য

চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার আফগান ইস্যুতে যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে এক বৈঠকে মিলিত হন চীনের স্টেট কাউন্সিলর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী সৈয়দ রসুল মুসাভি। বৈঠকে আফগানিস্তান নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা। শনিবার সিনহুয়া এ খবর দিয়েছে।

আফগান ইস্যুতে চার দেশের বৈঠক

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চার দেশ আফগানিস্তানের জন্য কয়েকটি কাজ একসাথে করবে। সেগুলো হল- আফগানিস্তানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করা, এক কণ্ঠে কথা বলা, আফগানিস্তানের ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারে কাজ করা এবং আফগানিস্তানের সঙ্কট উত্তরণে সুষ্ঠু ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখা। তিনি আফগানিস্তান সম্পর্কিত চারটি দেশের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার বিষয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান থাকবে- আফগানিস্তানের বিষয়ে দেশটি যেন আন্তরিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করে। অন্যান্য সমমনা দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রকেও আফগানিস্তান পুনর্গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত।

দ্বিতীয়ত, আমরা চাই- যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের উন্নয়নে জড়িত থাকুক এবং নির্দেশনা দিক। আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সত্যিকার অর্থে সম্মান করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া চারটি দেশের উচিত স্বাধীনভাবে তাদের উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আফগান জনগণকে সমর্থন করা।

আফগানিস্তান যাতে একটি বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার দিকে এগিযে যেতে পারে তাতে সহায়তা করতে হবে। মধ্যপন্থী বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং সংখ্যালঘু, নারী ও শিশুদের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে সহায়তা করতে হবে।

তৃতীয়ত, নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে আফগানিস্তানকে রক্ষা করা উচিত। আমরা মনে করি, নতুন আফগান সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবান সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলেও আমরা আশা করি। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে টার্গেট করে আফগানিস্তানে যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়, তালেবান সরকার তাদের মোকাবেলা করবে।

চতুর্থত, আফগানিস্তানকে সহায়তা করার জন্য আমরা সকল পক্ষকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উৎসাহিত করব। আফগানিস্তানের গুরুপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে চারটি দেশের উচিত শুধু জরুরি সহায়তা প্রদান নয়, বরং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও আফগান জনগণের অসুবিধা মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

পঞ্চম, আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক সহযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য সমর্থন দেয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে আফগানিস্তান যাতে ধীরে ধীরে স্বাধীন ও টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। দারিদ্র্য দূর করতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ নেটওয়ার্কে যাতে আফগানিস্তান থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

ওয়াং মনে করেন, তিনটি বিষয় আফগান নতুন সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে প্রতিবেশী দেশগুলো। সেগুলো হল- অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং প্রতিবেশী-সুলভ আচরণ। অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা আফগানিস্তানের জনগণকে বার্তা দিতে চাই যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমরা তাদের পাশে থাকব।

আফগান সরকার যাতে অন্তর্ভুুক্তিমূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন উপজাতি গ্রুপ ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে পারে সেই প্রত্যাশা রয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, তালেবান সব ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যাতে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে সেই আহ্বান জানান চার দেশের নেতারা।