আপনি পড়ছেন

আফগানিস্তানের রাজধানীর কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কারা হামলা করেছিল বা হামলার প্রতিশোধ হিসেবে কাকে হত্যা করা হল তা যুক্তরাষ্ট্রের অজানাই ছিল। কাবুল বিমানবন্দরে হামলায় নিহত হয়েছিল ১৮০ জন মানুষ। তাদের মধ্যে ছিল ১৩ মার্কিন সেনা। এখন প্রতিশোধ নিতে হবে ওয়াশিংটনকে। মিডিয়া ও জনগণকে চুপ করিয়ে দিতে হবে।

afghanistan car us drone aid workerমার্কিন ড্রোন হামলায় ধ্বংস হওয়া সেই সাদা গাড়ি, ছবি- দ্য গার্ডিয়ান

আর এ জন্য সাজাতে হবে সন্ত্রাসী হত্যার ‘নাটক’। আফগানিস্তানে এ রকমই ঘটনা ঘটে গেল সম্প্রতি। দেশটিতে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে তারা ড্রোন হামলা চালাল। বলা হল, এক সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং কাবুল হামলার পরিকল্পনাকারীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেদিন কি ঘটেছিল?

অ্যান্টি ওয়ার ডটকমের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, আগস্টে আইসিস-কে’র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে কাকে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে মার্কিন সরকারের কোনো ধারণা ছিল না। অথবা হয়তো তারা এভাবেই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে। মার্কিন প্রশাসন হত্যার খেলায় মত্ত হওয়ায় হয়তো তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এ কারণেই হয়তো সাধারণ বা নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়।

সেদিন যা ঘটেছিল: জেমারি আহমদী ২৯ আগস্ট কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এ সময় তার সাদা টয়োটা করোলা গাড়িতে আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এমটি এনজিওর কর্মকর্তা ছিলেন। ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ নামের এনজিওটি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান শরণার্থীদের খাদ্য ও পানি সরবরাহ করে থাকে।

গত ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ওই দিনটি অফিসে কাটান। সেখানে তিনি তার ব্যবসার পরিকল্পনা করেন এবং তার পরিবারের জন্য পানির পাত্র ভরাট করে সময় কাটান। কারণ মার্কিন সমর্থিত আশরাফ ঘানি সরকারের পতনের পর তার পরিবারে পানির সরবরাহ কমে যেতে থাকে। দিন শেষে আহমদী তার বাড়ির বাইরে যখন গাড়ি পার্ক করছিলেন, পরিবারের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন, তখনই ড্রোন হামলাটি হয়। এ সময় ৭ শিশুসহ ১০ জন প্রাণ হারায়।

ড্রোন অপারেটররা আহমদীকে হত্যার আগে ৮ ঘণ্টা ধরে তাকে অনুসরণ করে। কারণ গোয়েন্দারা সতর্ক করেছিল যে, কাবুল বিমানবন্দরে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া কাবুল বিমানবন্দরে বড় ধরনের ওই হামলার পরও যখন ড্রোন পরিচালনাকারীরা দেখল- এত আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যেও কাবুলের আশপাশে একটি সাদা গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচল করছে তখন সেটিকে তারা অনুসরণ করতে থাকল।

এদিকে আমেরিকার নাগরিকদের প্রত্যাহার কার্যক্রম ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টির তাড়া তো রয়েছেই। মার্কিন সামরিক কমান্ড উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা করে। নির্বিঘ্নে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরির বিষয়টি তারা ভিন্নভাবে নিল। তাদের মনে হল, এই গাড়িটি বিস্ফোরকভর্তি।

তারা মনে করল, আহমদীর গাড়িটি আইসিস সন্ত্রাসীদের গাড়ি। মূলত গাড়িতে থাকা আহমদীর পানির জগকে তারা বোমা মনে করে এবং ল্যাপটপ ও গাড়ির ভেতরে সংরক্ষিত জিনিসপত্র যেগুলো প্যাকেজিং করা ছিল সেগুলোকে বিস্ফোরক হিসেবে ধরে নিল। আর গাড়িটি পার্ক করার পরই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানল।

তবে হামলার পরই পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত করতে পারছি না যে, আমরা ড্রোন হামলায় কাকে হত্যা করলাম। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কাকে হত্যা করলাম? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমি জানি না।’

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ঘটনার সরকারি পর্যালোচনা চলমান থাকলেও যাদের প্রাণ গেছে তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। স্বজন হারানোর বেদনা মুছে দেওয়া সম্ভব না। সামরিক কমান্ডের লোকদের বোঝা উচিত, একজন লোককে হত্যা করার আগে মাত্র ৮ ঘণ্টা নজরদারি কি যথেষ্ট ছিল? কয়েকটি দিন কিংবা এক সপ্তাহ সময় নিলে, আশপাশের লোকজনের কাছে সাদা গাড়িটির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া কি অসম্ভব ছিল?

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.