তুরস্কের মারমারা সাগর ঘিরে নতুন সংকট

শৈবালসহ জলজ উদ্ভিদের আধিক্য ও ভাসমান আঠালো আস্তরণ থেকে পানি দূষণ তুরস্কের মারমারা সাগরের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবার নতুন সংকট দেখছেন। পানির নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা সাগরের পানিতে অক্সিজেন সংকটের ঝুঁকি দেখতে পেয়েছেন। স্থলবেষ্টিত এই সাগর সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে মারমারা সাগরে কিছু প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটতে পারে।

মারমারা সাগর, ফাইল ছবি

মারামার সাগরটি আকারে ছোট এবং স্থলবেষ্টিত। এটির চারপাশে রয়েছে ইজিয়ান, ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মারমারা সাগরকেন্দ্রিক নানামুখী সংকটের কারণে মানষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদের আধিক্য ও ভাসমান আঠালো আস্তরণের ফলে পানিতে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক অক্সিজেন সংকট।

মেরিটাইম ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রের পানিতে আঠালো আস্তরণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। গবেষকরা বিলিম-২ নামে একটি জাহাজ ব্যবহার করেন নমুনা সংগ্রহের জন্য। প্রায় ১১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে দূষণের মাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা, লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ও পানিতে প্লাঙ্কটনের উপস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়।

মারমারা সাগর, ফাইল ছবি

গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা ইউসেল জানাচ্ছেন, গবেষণায় অক্সিজেনের উপস্থিতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া ফসফরাস ও নাইট্রোজেনের উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়। ইউসেল বলছেন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস তৈরির ক্ষেত্রে মারমারা সাগর এখনও সমস্যার সম্মুখীন; যা আঠার মতো ভাসমান এক ধরনের আস্তরণ সৃষ্টির একটি বড় কারণ। এর পরোক্ষ ফলাফল হল জৈবিক উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের ঘাটতি, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে সাধারণত গ্রীষ্মকালে অক্সিজেনের ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করে এবং মারমারাতে এখন সেই অবস্থা চলছে। এর জন্য দায়ী কেবল ওই আঠালো আস্তরণ, যা সাগরটির পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।

এই গবেষক বলেন, আগের গবেষণায় দেখা গেছে- বসন্ত এবং গ্রীষ্মে ২৫ থেকে ৩০ মিটার (৮২ থেকে ১০০ ফুট) গভীরতার মধ্যে মাছের জন্য অক্সিজেনের মাত্রা পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এই গ্রীষ্মের শেষে এটি ২০ মিটারে নেমে আসে। আমরা আশা করি, শীতকালে অক্সিজেন তৈরি হবে- কারণ সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমে যাবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তুরস্কে মাছ ধরার মৌসুম শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত ধরা পড়া মাছের পরিমাণ কম হওয়ার খবর মেলেনি।

আঠালো ভাসমান আস্তরণ সম্পর্কে অধ্যাপক মোস্তফা ইউসেল বলেন, ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ এবং মারমারার উত্তর-পূর্বে ইজমিত উপসাগর জুড়ে পানি ওই আস্তরণে পুরোপুরি ঢেকে গেছে। আস্তরণ প্রস্তুতকারী জীবগুলো জুনের শুরুতে ২০ মিটার গভীরতায় খুব সক্রিয় ছিল।

এর আগে হাইড্রোবায়োলজিস্ট লেভেন্ট আরতিজ সতর্ক করেছিলেন, মারমারাতে সমুদ্রের আবর্জনা ইতোমধ্যেই সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি প্রজাতি ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, তার ভয় হচ্ছে, মারমার সাগরের এই ভয়াবহ অবস্থা আশপাশের সাগরগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বান্দরমা ওনেদি আইলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা সারি বলছেন, যদিও আগস্টের পর থেকে মারমারা সাগরের মাটি দৃশ্যত ভেসে উঠছে না, তবুও দুর্যোগ কোনোভাবেই শেষ হয়নি। অক্টোবরে পরিস্থিতি বিশেষভাবে অনুকূল হলে নভেম্বরে মারমারে আবার মাটিতে কাদা দেখা যাবে।