প্রধানমন্ত্রী-সেনাপ্রধান মুখোমুখি, কি ঘটছে পাকিস্তানে

পাকিস্তানের বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন, যে বিতর্কে যোগ দিয়েছে দেশটির বিরোধী দলগুলোও। কেউ বলছেন, অতীতের মতো দেশটিতে ফের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে যাচ্ছে। আবার সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শেষ চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ। কিন্তু ইসলামাবাদে আসলে কি ঘটছে, সবশেষ সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে একটি প্রতিবেদনে।

ইমরান খান ও কামার জাভেদ বাজওয়া, ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ডন জানায়, দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) মহাপরিচালকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে সামরিক বাহিনী ও ইমরান খানের সরকারের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলো কথা বলায় বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধান বিরোধী দলগুলো বলছে, সেনাবাহিনীকে নিয়ে মস্করা করছেন ইমরান খান। সেনাবাহিনী ও আইএসআইকে ‘টাইগার ফোর্স’ বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি। তবে ভেতরের স্পর্শকাতর এই উত্তেজনা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকার। এমন ঘটনা বিশ্বে বিরল উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেন, চলতি মেয়াদই নয়, পরের মেয়াদেও সরকার গঠন করবেন ইমরান খান।

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক, ফাইল ছবি

দেশটিতে আগের বেসামরিক সরকারগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে অনেক বার। অবস্থাদৃষ্টে এবারও সে রকম কিছুর ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। ফলে ক্ষমতার অন্দরমহলে বা সরকার ও সামরিক বৃত্তের ভিতরে কি ঘটছে, তা বাইরে থেকে বোঝা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) জানায়, গত ৬ অক্টোবর আইএসআই মহাপরিচালক পদে রদবদল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট ফয়েজ হামিদকে পেশোয়ার কোরের কমান্ডার করে তার স্থানে দায়িত্ব দেয়া হয় করাচি কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আনজুমকে।

বিষয়টি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী না হওয়ায় নিয়োগে আপত্তি জানান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এতে চটেছেন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। ফলে রদবদলের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তাতে সই করেননি ইমরান খান। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইএসআইয়ের মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে ইমরান খান ও বাজওয়া আলোচনা করেছেন। তারা সমস্যার সমাধানে একমতও হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, ফলে বিতর্ক যেন থামছেই না।

উল্টো ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) নেতারা বলছেন, আফগান পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় আইএসআইয়ের বর্তমান ডিজিকে আরো কিছু সময় তার পদে বহাল রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। আইন ও সংবিধান অনুযায়ী শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগের বিষয়টি সরকার প্রধান করে থাকেন।