করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আরও প্রকট করেছে। ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব প্রকাশিত বিশ্ব বৈষম্য প্রতিবেদন-২০২২ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারী ধনী ও দরিদ্রের আর্থিক ব্যবধানকে এমনভাবে বৃদ্ধি করেছে যা ২০ শতকে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত সুসময়েও দেখা যায়নি। ওয়ার্ল্ড স্যোসালিস্ট ওয়েব।
বৈষম্য প্রকট করেছে করোনাভাইরাস
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, ১৯৯৫ সালের পর থেকে গত বছর বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের নিট সম্পদ শুধু ২০২০ সালে ৩.৬ ট্রিলিয়নের বেশি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী সম্পদে তাদের অংশ ৩.৫ শতাংশে বেড়েছে। অপরদিকে মহামারিটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র অর্ধেক লোকের আয়ের অংশ ১৮২০ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ধনী। এরা বিশ্বব্যাপী আয়ের ৫২ শতাংশ ভোগ করছে, যেখানে দরিদ্রদের মাত্র ৮ শতাংশ অংশ রয়েছে।
করোনাভাইরাস
গড় হিসাবে শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তি প্রতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ ডলার উপার্জন করেন, যেখানে দরিদ্রদের এক ব্যক্তি বছরে মাত্র ৩ হাজার ৯২০ ডলার উপার্জন করেন।
আয় বৈষম্যের চেয়ে বৈশ্বিক সম্পদ বৈষম্য আরও প্রকট। বিশ্বের জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক মোট সম্পদের মাত্র ২ শতাংশের অধিকারী। বিপরীতে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ সব সম্পদের ৭৬ শতাংশের মালিক।
অতি-ধনীদের সম্পদ গত কয়েক দশক ধরে অসম পরিমাণে বেড়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে উৎপন্ন সমস্ত অতিরিক্ত সম্পদের ৩৮ শতাংশ পেয়েছে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষ। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ প্রতি বছর ৬ থেকে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৩৫ শতাংশ, যা বৈষম্যের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব এবং কোটি কোটি মানুষের অনিশ্চিত পরিস্থিতি শ্রমিকশ্রেণিকে কট্টরপন্থার দিকে উসকে দিচ্ছে। মহামারিতে বৈষম্যের ব্যাপক বৃদ্ধির মূল কারণ হল পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণির ব্যক্তিগত মুনাফা। জীবন বাঁচাতে এবং আরও বিপর্যয় এড়াতে শ্রমিকদের অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।