ভারতের একটি কলেজে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে ঘটেছে এই ঘটনা। সেখানকার একটি সরকারি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছয় শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, হিজাব পরায় তাদের কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিবিসি।
হিজাব পরায় ছয় শিক্ষার্থীকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের ভেতরে হিজাব খুলে ফেলতে বলা হয়েছে। তবে ক্যাম্পাস এলাকায় মেয়েরা হিজাব পরতে পারে। ওই ছয় ছাত্রী কলেজ ইউনিফর্ম পরে। তবে তাদের দোষ, তারা ঢিলেঢালা প্যান্ট ও বড় চাদর পরে এবং মাথা ঢেকে রাখে।
আলমাস এএইচ নামের একজন শিক্ষার্থী বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, আমাদের কয়েকজন পুরুষ শিক্ষক আছে। আমাদের ধর্ম ইসলামে পুরুষদের সামনে চুল ঢেকে রাখার বিধান রয়েছে। সেজন্য আমরা হিজাব পরিধান করি।
খবরে বলা হচ্ছে, ভারতে মহিলাদের হিজাব এবং বোরকা পরা অস্বাভাবিক নয়। এটা মুসরিম জনসাধারণের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টানরা নানা হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।
কর্ণাটকের সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল উপকূলীয় অঞ্চলের তিনটি জেলার মধ্যে একটি হচ্ছে উদুপি। ভাষ্যকাররা প্রায়শই এই অঞ্চলটিকে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডানপন্থী বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে। রাজ্যের ক্ষমতায়ও বিজেপি। প্রদেশটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু রাজনীতির পরীক্ষাগার বলা হয়।
এলাকাটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সতর্কতা এবং ঘৃণাত্মক বক্তৃতাসহ নানা হুমকির জন্য পরিচিত। নানা দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও হুমকির মুখে এখানকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ। ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ চলমান থাকায় এখানকার মুসলমানরা বিজেপি সরকারের প্রতি নাখোশ।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (সিএফআই) ইসলামিক দলের ছাত্র শাখা, যেটি পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার সাথে জড়িত। মিসেস আলমাস বলছেন, তিনি সিএফআই-এর সদস্য নন, কিন্তু ক্লাসে যেতে বাধা দেওয়ার পর তিনি সংগঠনটির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
কর্ণাটক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ বলেছেন, আমি এই বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছি। এটি মূলত রাজনীতি। এসব ঘটছে কারণ আগামী বছর নির্বাচন হওয়ার কথা। ভারতের পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার রাজনৈতিক শাখা উপকূলীয় অঞ্চলে অ্যাট্র্যাকশন লাভের প্রচেষ্টা করছে।
মিসেস আলমাস বলেন, যখন তারা কলেজে প্রথম বর্ষে হিজাব পরার চেষ্টা করেছিল, তখন বলা হয়েছিল, তাদের বাবা-মা একটি ফর্মে স্বাক্ষর করেছিলেন যাতে হিজাব না পরার ব্যাপারে শর্ত ছিল। কিন্তু ফর্মটিতে শুধু একটি বাধ্যতামূলক ইউনিফর্ম পরার কথা উল্লেখ রয়েছে, হিজাব সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
আলমাস জানান, গত ডিসেম্বরের শেষে করোনার দীর্ঘ ছুটির পর যখন তারা মাথায় স্কার্ফ পরে কলেজে ফিরে আসে, তখন তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্রে গৌড়ার অভিযোগ, ছয় মুসলিম ছাত্রী নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা তৈরি করছেন। বাকি ৭০ মুসলিম শিক্ষার্থীর কোনো আপত্তি নেই৷
অধ্যক্ষ বলছেন, প্রথমে ১২ জনের মতো হিজাব পরার পক্ষে জোর দিয়েছিল। পরে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার পর সেই সংখ্যা কমে আসে অর্ধেকে। আমরা শুধু বলছি, ক্লাসে তাদের হিজাব খুলে ফেলতে হবে।