মাকামে ইবরাহিম, কাবা শরিফের পাশে অবস্থিত বিশেষ একটি স্থাপনা। পবিত্র কাবার পূর্বদিকের তাওয়াফের স্থানে থাকা এই স্থাপনায় সোনালি রঙের বাক্সে বর্গাকৃতির একটি পাথর রাখা আছে। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান প্রায় এক হাত। মূলত এই পাথরটিই মাকামে ইবরাহিম।
কাবা শরিফ ও মাকামে ইবরাহিম
এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেছিলেন হযরত ইবরাহিম (আ.)। পাথরটির ওপরে এখনো ইবরাহিম (আ.)-এর পায়ের চিহ্ন আছে। পাথরের ওপর তার কদম মোবারক রাখলেই সেটা নরম হয়ে যেত এবং চার আঙ্গুল পরিমাণ দেবে যেত, যাতে নির্মাণ কাজের সময় পা পিছলে না যায়। যখন ওপরে উঠে কাজ করার দরকার হতো তখন এটার উপরে দাঁড়ালেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথরটি তাঁকে নিয়ে উপরে যেতো, আবার কাজ শেষ হলে নিচে নিয়ে আসত।
হাদিসের কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে, পাথরটির ওপর ভর করে হযরত ইবরাহিম (আ.) নিজের ইচ্ছেমত ওপরে-নিচে, ডানে-বামে নিয়ে প্রয়োজনানুসারে কাজ করেছিলেন। কাবাঘর নির্মাণ শেষে পাথরটি পাশে রেখে দেওয়া হয়। কালের বিবর্তনে সেটিই আজ মাকামে ইবরাহিম।
ভেতরের ওই পাথরখণ্ডটিই মাকামে ইবরাহিম
জানা গেছে, এক মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে মাকামে ইবরাহিম রাখার বক্সটি বানানো হয়েছে। পিতল ও ১০ মিলিমিটার পুরু গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ভেতরের জালে সোনা চড়ানো। সেখানেই রাখা হয়েছে মাকামে ইবরাহিম। পবিত্র কাবার দেয়ালে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহিমের দূরত্ব ১৪.৫ মিটার।
ইসলামি বিধান অনুযায়ী, পবিত্র কাবা ঘরের তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। তবে জায়গা না পেলে কাবা চত্বরের অন্য কোথাও আদায় করলে নামাজ হয়ে যায়।
মক্কার উম্মুল জুদস্থ জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহ বিন আবদুর রহমানের সূত্রে জানা গেছে, চার হাজার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মাকামে ইবরাহিমে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে। পাথরটির ওপর প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি এবং প্রস্থ ১৪ সেমি। পাথরের নিচের অংশে রূপাসহ প্রতিটি পাথরের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি এবং প্রস্থ ১১ সেমি। পাথরটিতে হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্নের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সেমি।