মহা বেকায়দায় আফগানিস্তানের সমকামীরা

পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সময়ও খুব একটা ভালো ছিলেন না আফগানিস্তানের সমকামী-রূপান্তরকামীরা। সমাজ থেকে এক প্রকার বহিষ্কৃতই ছিলেন তারা। তারপরও ভবিষ্যতে ভালো সময়ের আশা করেছিলেন। তবে গত বছরের ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহা বেকায়দায় পড়ে গেছেন তারা।

ভয়ে আছে আফগানিস্তানের সমকামীরা

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, তালেবানের শাসনে সমকামীদের জীবন ওষ্ঠাগত। আগে যেমনই হোক না কেন, বর্তমানে আফগানিস্তানের সমকামী, উভয়কামী, রূপান্তরকামী বা ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ধারীদের জীবনে মারধর বা প্রাণনাশের হুমকি, নির্যাতন মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। এলজিবিটি সম্প্রদায়ভুক্ত এসব সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে এইচআরডব্লিউ।

তালেবান শাসনের আগেও সামাজিকভাবে ঘৃণিত ছিলেন এই সম্প্রদায়ভুক্তরা। সমকামিতা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তখনও রাষ্ট্র তাদের রক্ষক হয়নি। এরপরও কিছুটা হলেও নিজস্ব পরিসর খুঁজে পেয়েছিলেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাদের আশা ছিল, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে তালেবানের বিজয়ে তাদের আশা শেষ হয়ে যায়।

সমকামীদের ব্যাপারে পুরোপুরি কঠোর অবস্থানে তালেবান

এইচআরডব্লিউর রিপোর্টে দাবি করা হয়, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকারগুলো বাতিল করে দেয় তালেবান। গত বছর সংবাদমাধ্যমে তালেবানের এক মুখপাত্র বলেছিলেন, সমকামীদের জন্য মাত্র দুটি শাস্তি রয়েছে। পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা অথবা এমন এক দেয়ালের সামনে দাঁড় করানো যাতে তারা চাপা পড়ে মরবেন।

জেবা গুল নামের রূপান্তরকামী এক কিশোরী জানান, আমি সাজগোজ করতে, মেয়েদের জামাকাপড় পরতে ভালোবাসি। নাচতেও ভালো লাগে। তবে বাড়িতে এ সব করা যেত না। আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে পেটাতো। এবার তালেবানের ভয়ে জেবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তার পরিবার। জেবা বলেন, এরপর থেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেই পার্কে ঘুমোতে হয়। এ সময় তিনি নানা রকম নির্যাতনের মুখে পড়েন।

জেবা বলেন, গত বছরের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানুষ আমাদের পছন্দ না করলেও ক্ষতি করার সাহস করতেন না। ভিন্ন কোনো চিন্তা থাকলেও তারা শাস্তির ভয়ে পিছিয়ে আসতেন। তবে ১৫ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। কারণ এখন তো আমাদের ক্ষতি করলেও শাস্তি দেওয়ার কেউ নেই!