জায়গাটা কিছুটা দুর্গম, তাই সেখানে আইন পৌঁছায় না। কিন্তু একটা জিনিস অবাধে পৌঁছে, সেটা হলো অস্ত্র। যেভাবে পৌঁছে, সেভাবে আবার সেখান থেকে ছড়িয়েও পড়ে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু হয়েছে হোম সার্ভিস পদ্ধতিও। শোনা যায়, আফগান সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চোরাবাজারে মেলে সব ধরনের অস্ত্র। কিছুটা বাধা থাকলেও দীর্ঘকাল ধরে চলছে এই ব্যবসা।
চোরাই মার্কেটের একটি অস্ত্রের দোকান
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে চীনা ৯ এমএম পিস্তল থেকে আধুনিক জার্মান এমপি-৫ সাব-মেশিনগান, হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি মাঝারি ও ভারী মেশিনগান, মর্টার, রকেট লঞ্চারেরও দেখা মেলে পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা আদমখেলের অস্ত্র বাজারে। কেউ কেউ বলেন, কামান চাইলেও নাকি সেখানে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা আফগানিস্তান ত্যাগের পর পরিত্যাক্ত অস্ত্রে ওই বাজারে এসেছে নতুন জোয়ার।
এলাকা দুর্গম হতে পারে, কিন্তু এখানকার কারবারীরা ব্যাকডেটেট থাকতে রাজি নন। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে ব্যবসার ধরনও। চালু হয়েছে ‘হোম ডেলিভারি’ সার্ভিসও। অনলাইনের মাধ্যমে অস্ত্র পছন্দ করার পর ডিলারকে জানালে লোক মারফত তা পছন্দের জায়গায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
মার্কিনীদের সঙ্গী এমন অনেক অস্ত্রের ঠিকানা এখন চোরাই মার্কেটের দোকানগুলো
জানা গেছে, চোরাবাজার হওয়ায় এখানকার অস্ত্রের দামও নাগালের মধ্যেই। একটু পুরনো মডেলের কালাশনিকভ রাইফেল বা পিস্তল মেলে সস্তা স্মার্টফোনের চেয়েও কম দামে। আবার তারচেয়ে কয়েক হাজার রুপি বেশি খরচ করলেই নিজের করে নেয়া যাবে বিশ্বখ্যাত অস্ত্রনির্মাতা ‘হেকলার অ্যান্ড কখ’-এর এমপি-৫ অস্ত্রটিও।
আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার প্রবেশের পর থেকেই ডেরা আদমখেলের অস্ত্র বাজারের রমরমা অবস্থা শুরু হয়। এরপর থেকে গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের জেরে খাইবার-পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই বাজারে পণ্যের তেমন ঘাটতির কথা শোনা যায়নি।
কেবল বাইরের অস্ত্রই নয়, এ অঞ্চলের অনেকে অস্ত্রও সেখানে পাওয়া যায়। আদমখেলের কারিগরেরা ইটালিয়ান ব্যারেটা বা বেলজিয়ান ব্রাউনিং পিস্তলের হুবহু তৈরি করে ফেলতে পারেন। এসব নকল অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার সময় আওয়াজ এবং ঝাঁকুনি (রিকয়েল) বেশি হলেও মারণক্ষমতা প্রায় সমান।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ফৌজ আফগানিস্তান ছাড়ার পর তাদের ফেলে যাওয়া সাঁজোয়া গাড়ি, হালকা কামানও (মাউন্টেন আর্টিলারি) বিক্রি হয়েছে এই চোরাই মার্কেটে। এবার আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর রেখে যাওয়া নানা মারণাস্ত্র আবারো এই মার্কেটের রমরমা অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।