মুখ্যমন্ত্রী নয়, প্রধানমন্ত্রী চাই

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা করেছেন, তিনি পাকিস্তান স্পিডে কাজ করতে চান। নিজের বিখ্যাত পাঞ্জাব স্পিডের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেছেন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার দ্রুত ও কার্যকর প্রশাসনের বর্ণনায় ‘পাঞ্জাব স্পিড’ শব্দবন্ধ প্রয়োগ হতো।

শাহবাজ শরিফ, ফাইল ছবি

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি দেখিয়েছেন যে তিনি যা বলেন, তা-ই বুঝাতে চান। প্রধানমন্ত্রী শনিবারকে কর্মদিবস করেছেন, সকাল ৮টা থেকে অফিস সময় প্রবর্তন করেছেন, চলতি সপ্তাহে আরও আগের দিকে একদিন সকাল ৭টায় ইসলামাবাদ মেট্রোর কাজ পরিদর্শন করতে গেছেন।

শাহবাজ শরিফ জানেন যে, তাকে নিজের খ্যাতির সঙ্গে লড়াই করতে হবে এবং এটা করার যথেষ্ট সময় তার হাতে নেই। তিনি এটাও বুঝেন যে, তার সরকারকে প্রশাসন পরিচালনায়, দক্ষতায় ও সেবা প্রদানে পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে স্পষ্ট পার্থক্য দৃশ্যমান করতে হবে।

এটা যদি কাজে প্রতিফলিত হয় তাহলে স্বাগত জানাতেই হবে। তবে একটা সতর্কবাণী উচ্চারণ করতেই হয়: একজন প্রধানমন্ত্রীর ও একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাজের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য রয়েছে।

শরিফ এক দশক পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ওই পদে নিজের কাজের ধরন সংহত করেছেন। একটি প্রদেশের প্রশাসন প্রথমত প্রকল্প-ভিত্তিক এবং এজন্য প্রয়োজন হয় ধারণা, সময়সীমা, বাজেট, বাস্তবায়ন ও কঠোর তদারকি-সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা-দক্ষতা।

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে শরীফ এসব কাজে আমলাতন্ত্রকে দক্ষভাবে ব্যবহার করেছেন নিজের মন্ত্রিসভাকে পাশ কাটিয়ে। তিনি ছিলেন ওয়ান-ম্যান শো, যার সর্বোচ্চ সুবিধা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার এবং বিষয়ের গভীরে যাওয়ার প্রবণতা, অহেতুক কালক্ষেপণ ও লাল ফিতার দৌরাত্ম ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা যাতে যথাসময়ে প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সেবা প্রদান করেন, সেটা নিশ্চিত করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে এসেছেন। ফেডারেল সরকার প্রজেক্টের চেয়ে বেশি পলিসি-বিষয়ক; এখানে এক ব্যক্তি-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত প্রণয়নের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় বেশি জরুরি।

প্রধানমন্ত্রীকে তাই তার গতি, দক্ষতা ও কঠোর শ্রমনিষ্ঠাকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে কেবল আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার মাধ্যমে কার্য সম্পাদনে অভ্যস্ত হতে হবে। এছাড়াও তাকে নিজের মনমতো সবকিছু করার ঝোঁক সামলাতে হবে, কারণ কেন্দ্রে সরকার পরিচালনা করতে হলে বিদ্যমান ব্যবস্থা, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, দাতা সংস্থাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে পেতে তাকে জায়গা ছাড়তে হবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করে নিজের কাজের গতি, মনোযোগ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটাবেন, ততক্ষণ তিনি এর একটা ফলাফল পাবেন।

ডনের সম্পাদকীয়, ভাষান্তর করেছেন সাইদ হাসান