খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ভারত অবসরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বয়স্ক ব্যাক্তিরা। তাদের আশঙ্কা, অবসরে গেলে কী খাবেন, কোত্থেকে খাবেন। তাই আগে থেকেই অবসর-পরবর্তী দুশ্চিন্তা কমাতে খাওয়া খরচ কমিয়ে সঞ্চয়ে মনোযোগী হয়েছেন। বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ভারতের দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
রুপি
মহামারি কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে খাদ্য ও জ্বালানির খরচকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বয়োবৃদ্ধরা।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এপ্রিলে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, ৭.৭৯ শতাংশ। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করেছে দেশটির উচ্চ মূল্যস্ফীতি অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজায় থাকবে।
গম, ভোজ্য তেল, শাকসবজি, ফল, মাংস এবং চায়ের মূল্য এক বছরে বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। রান্নার গ্যাস ও পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।
ভারতের দাতব্য সংস্থা হেল্পএজ ইন্ডিয়ার পরিচালক অনুপমা দত্ত বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বয়স্কদের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। ভারতে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রায় ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৯ কোটিই বেঁচে থাকার তাগিদে এখনও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
দিল্লীর হাইকোর্টে কাজ করেন ৬৬ বছর বয়সি আইনজীবী টিএল ওয়ালি। ছিলেন অবসরের অপেক্ষায়। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, আমি অবসরের কথা ভাবতেও পারি না। ফলের মতো দামি খাবারগুলো তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। বাইরে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করাও বাদ দিয়েছেন।
তিনি আরও অবসরে তো যেতেই হবে। অবসর-পরবর্তী সময়ের কথা মাথায় রেখেই খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।
ভারতের গ্রস সেভিংস রেট মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে জিডিপির ৩০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মহামারির আগে এর হার ছিল ৩২ শতাংশেরও বেশি। শিগগিরই এ অবস্থার কোনো পরিবর্তনের আশা দেখতে পারছেন না অর্থনীতিবিদরা। ভারতে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের গড় সুদের হারও গত তিন বছরে ৮.৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এ কারণে কিছু পেনশনভোগী ইকুইটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে নাম লিখিয়েছেন।
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি, বিজেপি স্বীকার করেছে, বয়স্করা চলমান মুদ্রাস্ফীতির শিকার হয়েছেন।
বিজেপির অর্থনীতি বিষয়ক মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেন, সরকার খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তাসহ তাদের সুরক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই সরকার মহামারি ত্রাণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছে।