বিপ্লব ঘটাতে আসছে ‘ব্রাহামা’ জাতের গরু

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কল্যাণে প্রথম ‘ব্রাহামা’ জাতের গরুর নাম শোনেন রাজশাহীর পশু খামারিরা। প্রথমে খুব একটা আমলে না নিলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক সভা-সেমিনার আর বোঝানোর ফলে একটা সময় ‘ব্রাহামা’ নামের অচেনা এক গরুর জাত উৎপাদনে রাজি হন ১৫০ জন খামারি।

সেই থেকে শুরু। বর্তমানের বাংলাদেশে গরুর মাংস উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে অচিরেই আসছেন রাজশাহীর ওই খামারিরা।

ব্রাহামা জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য কী? সাধারণ একটি গরু থেকে খামারিরা যেখানে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ কেজি মাংস পান, সেখানে ব্রাহামা জাতের একটি গরু থেকেই পাবেন ৮০০ থেকে এক হাজার কেজি মাংস। একটি ব্রাহামা জাতের গরু থেকে সাধারণ গরুর সাত-আট গুণ বেশি মাংস পেতে গরুর প্রতি আলাদা কোনো যত্নও নিতে হবে না। গবাদি পশুর জন্য নির্ধারিত প্রতিদিনকার খাবার খেয়েই গায়ে-গতরে বড় হতে থাকবে ব্রাহামা।

গরুকে মোটাতাজা করনের লক্ষ্যে ষ্টেরয়েড গ্রুপের নিষিদ্ধ কোনো ওষুধও খাওয়াতে হবে না। কিংবা বাড়তি হরমোন প্রয়োগেরও প্রয়োজন নেই। কৃত্রিম সব পন্থা ছাড়াই এই ব্রাহামা গরু সাধারণ গরুর চেয়ে সাত-আট গুণ বেশি মাংসের যোগান দিয়ে যাবে।

নতুন এই মাংসল গরু উৎপাদনের লক্ষ্যে খামারিদের আগ্রহ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যেই রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

একজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, মাংসল জাতের গরু উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর পবা, পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে ব্রাহামা জাতের গরুর উৎপাদন চলছে। ব্রাহামা মূলত আমেরিকান একটি গরুর জাত। আমেরিকার আবহাওয়ায় এই গরুর ওজন হয়ে থাকে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার কেজি পর্যন্ত। তবে বাংলাদেশে একটি গরু থেকে এই পরিমাণ মাংস পাওয়া কষ্ট হলেও ৮০০ থেকে এক হাজার কেজি মাংস উৎপাদন খুবই সম্ভব বলে জানা যায়।

ব্রাহামা জাতের গরু থেকে বাংলাদেশী গাভীকে সিমেন দেয়া হলে সেখান থেকে জন্ম নেয়া বাছুর পরিণত বয়সে এক হাজার কেজি ওজনের হতে পারে। রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে মাত্র ত্রিশ টাকার বিনিময়ে ব্রাহামা জাতের গরুর সিমেন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই সিমেন বাইরে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও অনেক দাম। শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্রাহামা জাতের গরুর প্রচলন ঘটাতে সরকার এই খাতে ভর্তুকি দিয়ে এই জাতের গরুর সিমেন নিয়ে এসেছে।

ইতোমধ্যেই ওই ১৫০ জন খামারির খামারে প্রায় তিন শতাধিক ব্রাহামা জাতের বাছুর-বকনার জন্ম হয়েছে। পরিণত বয়সে ওই একেকটি গরুর দাম হবে কমপক্ষে আড়াই লক্ষ টাকা।
২০১৪ সালে শুরু করা এই প্রকল্প এখন অনেকটাই ফল দেয়ার অপেক্ষায়। রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশবাসীকে ব্রাহামা নামের এই মাংসল গরুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অপেক্ষা করছেন।

তারা জানান, ব্রাহামা গরুর অধিক প্রচলন শুরু হলে বাংলাদেশে গরুর মাংসের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। আর অধিক হারে গরুর মাংস উৎপাদন হলে বাজারে মাংসের মূল্যও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।