ফেসবুক গ্রুপ ‘ফুডব্যাংক’ অ্যাডমিনের অভিনব চাঁদাবাজি!

প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের ফেসবুক গ্রুপ- ফুডব্যাংক। এর সদস্যরা কেবল খাবার-দাবার, রেস্তোরাঁ বা খাবারের মান ও দোকান নিয়ে এই গ্রুপে আলোচনা করেন। কিন্তু গ্রুপটি যারা পরিচালনা করেন তাদের মধ্য হতে একজনের বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। এক খাবারের দোকানের (সঙ্গত কারণে রেস্টুরেন্টের নাম প্রকাশ করা হলো না) মালিকের কাছ থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দাবি করেছেন তিনি। এ সংক্রান্ত কিছু স্ক্রিনশট টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের সংগ্রহে আছে।

ছবি - সংগৃহীত

এ সংক্রান্ত স্ক্রিনশটগুলো টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের  হাতে এলে ওই রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হয়। রেস্টুরেন্টটির মালিক ফুডব্যাংকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তিনি টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের প্রতিবেদককে বলেন। 

ফুডব্যাংক গ্রুপ-এর ঠিকানা facebook.com/groups/foodbankbd। তাদের অ্যাডমিনের (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না) বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ওই রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেছেন। বিনিময়ে ওই খাবারের দোকানের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পোস্ট গ্রুপে এলে তা ডিলিট না করার কথা বলেন তিনি। 

ছবি - সংগৃহীত

অ্যাডমিন এবং ওই রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে হওয়া চ্যাটিং থেকে বোঝা যায়, একজন ক্রেতা ওই খাবারের দোকান থেকে সেবা গ্রহণ করে সে বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়ে খাবারের মান নিয়ে গ্রুপে একটি পোস্ট দেন। গ্রুপের সাধারণ সদস্যরা এতে ওই খাবারের দোকানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এরপরই অ্যাডমিন ওই রেস্টুরেন্টের দোকানের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁদা দাবি করেন এবং জানান যে, যদি চাঁদা দেয়া না হয় তাহলে ফুডব্যাংক থেকে ওই দোকানের প্রশংসা করে লেখা পোস্ট সরিয়ে দেয়া হবে।

ছবি - সংগৃহীত

প্রাথমিকভাবে দোকান মালিকের কাছে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেন অ্যাডমিন। উত্তরে রেস্টুরেন্টের মালিক বলেন যে, তার ছোট দোকান। মাত্র ১২ জন ক্রেতা একসঙ্গে তার রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা নিতে পারেন। তার পক্ষে এতো টাকা দেয়া সম্ভব না।

কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে গ্রুপে রেস্টুরেন্টের বিষয়ে পোস্ট এলে ব্যবসার জন্য ভালো হতে পারে, এ সব চিন্তা করে রেস্টুরেন্টের মালিক বাধ্য হয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু অ্যাডমিন তা না মেনে অন্তত ১৫ হাজার টাকা করে দাবি করেন।

ছবি - সংগৃহীত

এরপর রেস্টুরেন্ট মালিক জানান যে, ব্যাংক লোন নিয়ে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কথাও বলেন। তারপরও ওই অ্যাডমিন ১৫ হাজারের কম নিতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে রেস্টুরেন্ট মালিক ১৫ হাজারে সম্মতি জানিয়ে জানতে চান, এতে তিনি কী কী সুবিধা পাবেন।

অ্যাডমিন তাকে জানান, প্রতি মাসে তাকে ১৫ হাজার করে টাকা দিলে গ্রুপে ওই দোকান নিয়ে কোনো নেতিবাচক পোস্ট যাবে না। বরং যথাসম্ভব ইতিবাচক পোস্ট করা হবে এবং মন্তব্যের ঘরে ‘প্রফেশনাল মার্কেটার’রা ভালো ভালো মন্তব্য করবে।

ছবি - সংগৃহীত

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই রেস্টুরেন্টের মালিক অ্যাডমিনকে টাকা না দেয়ায় ফুডব্যাংক গ্রুপ থেকে সাধারণ ক্রেতাদের অনেক পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়, যা ওই রেস্টুরেন্টের প্রশংসা করে পোস্ট করা হয়েছিলো। এ অভিযোগের বিষয়ে ওই অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিলো। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যার দিকে ফুডব্যাংক গ্রুপে গিয়ে দেখা যায়, একজন অ্যাডমিন তাদের প্রতি আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

উল্লেখ্য, ফুডব্যাংক গ্রুপের বিরুদ্ধে এ রকম আরো কিছু অভিযোগ আছে। আরো অন্তত দুটি খাবার দোকানের খবর পাওয়া গেছে, যাদের কাছে ফুডব্যাংক থেকে টাকা দাবি করা হয়েছিলো। তারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয়, গ্রুপে তাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট করছে গ্রুপটির অ্যাডমিনরা, এমন অভিযোগও আছে।