ঢাবিতে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতির ঘটনায় সমালোচনার ঝড়

২৮তম উপাচার্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ডাকা গত শনিবারের সিনেট অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে জড়ো হয়েছিল শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সিনেট ভবনে প্রবেশে বাধা দিতে যেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে সমালোচনার ঝড়। রোববার দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে এই ঘটনা। শিক্ষার্থীদের সাথে হাতাহাতিতে জড়ানো এবং ছাত্রীদের লাঞ্চিত করার ছবি টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর চলছে তুমুল সমালোচনা। সোমবার এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। 

অন্যদিকে ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ঘটনার জন্য বামছাত্র সংগঠনগুলোর সমালোচনা করেছে। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষকরা যেভাবে ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে  জড়িয়েছেন তা মোটেও শোভনীয় নয়। এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে ক্ষুন্ন করেছে। 

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, শনিবার শিক্ষকরা যেভাবে আমাদের উপর হামলা করেছেন তার তীব্র নিন্দা জানাই। তারা ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছেন, ওড়ানা টেনেছেন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান শনিবারের ঘটনাও জড়িত ছিলেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছিল।

শিক্ষার্থীদের হামলায় দুই জন শিক্ষক আহত হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, শিক্ষকরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্তান ভাড়া করে এনে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছেন। তাদের হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমাদের কিল-ঘুষি মারতে যেয়ে ওই দুই শিক্ষক হাতে ব্যাথা পেয়েছে। এরজন্য আমরা কি করে দায়ী হই। 

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর সিনেট নির্বাচন হচ্ছে, ভিসি নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু আমাদের ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। সিনেটে ছাত্রদেরও অধিকার আছে বিগত ২৭ বছর ধরে সে অধিকার দেয়া হচ্ছে না। কিছু শিক্ষক নামের গুন্ডারা যেভাবে শিক্ষার্থীদের গলা টিপে ধরেছে, হামলা করেছে তা অবর্ণনীয়, ন্যাক্কারজনক। ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। 

লিটন নন্দী বলেন, দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন না করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের তদন্ত কমিটি ঘটন করা প্রহসনমূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সর্বোচ্চ দলীয় করণ এবং স্বৈরতান্ত্রিত মনোভাব বিরাজ করছে। আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো। ডাকসুর দাবীতে আমরা আরো বড় করে আন্দোলনে নামবো।

এদিকে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতির ঘটনাকে ভিন্ন চোখে দেখছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ বিভিন্ন হলের নেতারা শনিবারের ঘটনার জন্য বাম ছাত্র সংগঠনের নিন্দা করেছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, কতিপয় বাম শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদেরে সাথে যে ধরনের আচরণ করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমার বাবা একজন শিক্ষক। শিক্ষকদের গায়ে হামলা কোন যুক্তিতেই মেনে নিতে পারছি না।

শিক্ষকরাও ছাত্রদের গায়ে হাত দিয়েছেন এবং ছাত্রীদের লাঞ্চিত করেছেন। যার ভিডিও এবং ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে জানালে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, মানববন্ধন করার জন্য কেন ওইদিনই সিনেটে যেতে হবে? সেখানে একটা কর্মসূচি চলমান ছিল। তার মধ্যে তারা কেন পাল্টা কর্মসূচি ডেকেছেন? তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষকদের উপর হামলা করা।