বানভাসিদের কাছ থেকেও ঋণের কিস্তি আদায় করছে এনজিওগুলো

বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি কুড়িগ্রামবাসীর। বাড়ির চারপাশে কাদা থকথক করছে। বাড়ি বলতে অবশিষ্ট আছে শুধু একটা টিনের চাল। ঘরের বেড়া, আসবাবপত্র সব ভেসে গেছে পানিতে। নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। রাত হলে ওই থকথকে কাদার ওপরেই পলিথিন বিছিয়ে কোনোরকমে সময় পার করছেন সবাই।

এরই মধ্যে ঋণের কিস্তি আদায় করতে বাড়িতে বাড়িতে ধর্ণা দিতে শুরু করেছে বিভিন্ন এনজিও’র কর্মীরা। বন্যার দুর্ভোগের চিত্র দেখিয়েও রেহাই মিলছে না ঋণের কিস্তি থেকে। জোর করে এই সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো থেকেই আদায় করা হচ্ছে কিস্তি।

এমনই দুর্ভোগের শিকার একজন হলেন কুড়িগ্রামের বলদিপাড়া গ্রামের আক্তারুন (৪০)। তিনি জানান, ঘর তৈরির জন্য সোসাইটি ফর সোশাল সার্ভিস (এসএসএস) নামের একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এখন বন্যায় সেই ঘর ভেসে গেছে, খাওয়ার টাকারি অভাব। তারপরও কিস্তি থেকে কিছু দিনের জন্য রেহাই মিলছে না।

আক্তারুন জানান, এনজিওকর্মীরা এসে টাকা না দেয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে যেতে চায় না। শেষে আরেকজনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার করে এনে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি।

প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট কুড়িগ্রামে ত্রাণ বিতরণ করতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি ঋণের কিস্তি আদায়ে বানভাসিদের জোর-জুলুম না করতে এনজিওগুলোকে সতর্ক করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তার পর বন্যাকবলিত এলাকার ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে এনজিওগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। তারপরও এনজিওগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি।

আক্তারুনের মতো ঋণের কিস্তি আদায় নিয়ে দুর্দশায় আছেন শত শত বানভাসি পরিবার। সবারই অভিযোগ, বন্যায় আমরা কেউ খেতে পাচ্ছি না। ত্রাণের অপেক্ষায় দিন গুনি। এই সময়ে এনজিও কর্মীরা আমাদের বাড়ি এসে ঋণের কিস্তি আদায়ে বসে থাকে। দিনের বেলা তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এনজিওকর্মীরা রাতেও বাড়িতে হানা দেয়।

বন্যার্তদের কাছ থেকে জোর করে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ এসেছে সোসাইটি ফর সোশাল সার্ভিস (এসএসএস), গ্রামীন ব্যাংক ও আশার বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও কয়েকটি ছোটখাট এনজিও রয়েছে অভিযোগের তালিকায়।

কিস্তি আদায়ের কথা স্বীকার করেন সোসাইটি ফর সোশাল সার্ভিস এনজিও যাত্রাপুর শাখা ব্যবস্থাপক হাসান আলী। তিনি বলেন, আমরা কারও কাছ থেকে জোর করে কিস্তি আদায় করছি না। যারা দিতে পারছে তাদের কাছ থেকে নিচ্ছি, যারা পারছে না তাদের কাছ থেকে নিচ্ছি না। তিনি জানান, উল্টো তাদের এনজিও থেকে বানভাসি প্রতি ঋণগ্রহীতাকে এক হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমরা প্রতিটি এনজিওকে বন্যাকবলিত এলাকার ঋণ গ্রহীতাদের কাছে কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছি। এ সময় তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।