‘হেপাটাইটিস বি’-এর চিকিৎসায় বাংলাদেশি উদ্ভাবকের নতুন ওষুধ

হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অধিক কার্যকরী ও উন্নতমানের ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশের দু’জন গবেষক। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে আগামী বছর থেকেই এই ওষুধ বাজারজাত করা হবে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা বাসস।

হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন ধরনের ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’ উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব এবং জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এই ওষুধটি প্রস্তুত ও বাজারজাত করবে বলে ওষুধটির দাম তুলনামূলক কম ও সহজলভ্য হবে বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবকরা।

অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব বলেন, ‘আমরা কোন যাদুকরী ওষুধ উদ্ভাবন করিনি। কিন্তু ’ন্যাসভ্যাক’ ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় হেপাটাইটিস ‘বি’ আক্রান্ত ৫০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে আর লিভারের প্রদাহে আক্রান্ত শতভাগ রোগীর চিকিৎসায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এই ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ের প্রধান পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. মাহতাব এবং ওষুধটি উদ্ভাবনের জন্য মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করেন ডা. আকবর।

বাংলাদেশে ১৮ জন ক্রনিক হেপাটাটিস ‘বি’ রোগীর ওপর ২০০৯ সালে ‘ন্যাসভ্যাক’ ওষুধের প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। এতে সফলতা পাওয়ায় পরবর্তীতে ২০১১ সালে ১৫১ জন রোগীর ওপর ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়।

এই ১৫১ জন ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ রোগীকে দুই দলে ভাগ করে, তাদেরকে যথাক্রমে ‘ন্যাসভ্যাক’ ও পেগাইলেটেড ইন্টারফেরনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ট্রায়ালে সর্বমোট ৭৫ জন রোগীকে মোট ১৫ বার ‘ন্যাসভ্যাক’ আর অন্য ৭৬ জন রোগীকে মোট ৪৮ বার পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন প্রয়োগ করা হয়।

ডা. মাহতাব বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা যায় পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন-এর চেয়ে ন্যাসভ্যাক অধিক কার্যকর। এরপর এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এর চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।’

কিউবার ওষুধ প্রশাসন ইতিমধ্যেই ন্যাসভ্যাক-কে অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে ডা. মাহতাব বলেন, ‘বেলারুশ, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়া এবং এঙ্গোলাতেও হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় ন্যাসভ্যাক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।’

হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ্য করে তোলার মতো এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা প্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করেন যার মাধ্যমে রোগীরা ধীরে ধীরে সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভ করে এবং লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত না হয়। ডা. মাহতাব বলেন, ‘ন্যাসভ্যাক শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসায় নয় বরং যেকোন ক্রনিক ইনফেকশনের জন্যও কার্যকর বলে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে।

একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা উল্লেখ করে ডা. মাহতাব বলেন, দেশে ৫ কোটির বেশি লোক হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৮০ লাখ ক্রনিক হেপাটাইটিস ‘বি’ দ্বারা সংক্রমিত রোগীর লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।