ইউজিসি: শিক্ষকরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবে না

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। এছাড়াও রাজনৈতিক মতামত প্রচার করতে পারবেন না এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে-সংবিধির গাইডলাইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)। গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়, ‘তবে তারা (শিক্ষকরা) রাজনৈতিক মতামত পোষণের স্বাধীনতা ভোগ করবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য কার্যাবলি পরিচালনার বিষয়ে ৩৭টি দিকনির্দেশনা আছে গাইডলাইনের খসড়ায়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গাইডলাইনটি চূড়ান্ত করে আগামী এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এছাড়াও গাইডলাইনে বলা হয়, ‘প্রত্যেক বিভাগে নির্ধারিত সংখ্যক পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ইউজিসির অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। যখন-তখন কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।’   

এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উচ্চশিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতেই আমরা এ গাইডলাইন তৈরি করেছি। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাধ্যতামূলকভাবে (২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৭ ধারায়) সংবিধি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দু-একটি বাদে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তা তৈরি করেনি। আবার সংবিধি যা হয়েছে তা নিজেদের স্বার্থে করেছে। তাছাড়া সংবিধিগুলো একেকটি একেক রকম। এ কারণে আমরা একটি আদর্শ সংবিধির গাইডলাইন তৈরি করছি।’

ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি নয়: খসড়া গাইড লাইনে বলা হয়েছে, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকার ও ইউজিসির ভর্তির যোগ্যতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

দরিদ্র মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়াতে হবে: আইন অনুযায়ী,দরিদ্র মেধাবীদের বিনামূল্যে পড়াতে হবে। টিউশনসহ অন্য ফি নেয়া যাবে না। এ ধরনের শিক্ষার্থীর তালিকা ইউজিসিকে দিতে হবে। 

মুক্তিযোদ্ধা কোটা: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩ ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। বর্তমানে কোটা শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য গোপন রাখে।

চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন: চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন লাগবে। ওই প্রতিবেদনে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য থাকলে স্থায়ী নিয়োগ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে এক মাসের নোটিশে চাকরিচ্যুত করা যাবে।

ভিসির ক্ষমতা: খসড়া সংবিধিতে ভিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী ও একাডেমিক কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার নির্দেশে ট্রাস্টি বোর্ড, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা রেজিস্ট্রার আহ্বান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভিসি দায়ী থাকবেন। তিনি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

খসড়ায় আরও  যা রয়েছে: নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ অন্তত ৫ বছর চাকরি করলে আনুতোষিক এবং কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করলে অবসর ভাতা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই সরকারের নির্ধারিত হারে ভাতা দিতে হবে। এছাড়া তিন মাসের নোটিশ বা তিন মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে চাকরির অবসান করানো যাবে। আর এক মাসের নোটিশ বা এক মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে শিক্ষানবিশের চাকরি থেকে অবসান দেয়া যাবে। স্থায়ী নিয়োগের তারিখ থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে। নিয়োগপ্রাপ্তরা সাত ধরনের ছুটি ভোগ করতে পারবেন।