ইয়াবা ব্যবসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা!

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়। তাদের সঙ্গে ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতারাও যুক্ত রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাবি ও রুয়েটের প্রায় ৪৪ জন ভয়াবহ ইয়াবা ব্যবসার চক্র গড়ে তুলেছেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ইতিমধ্যে রাবির ৩৪ জন ও রুয়েটের ১০ জনকে শনাক্ত করে তালিকা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা। এটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে।

তবে অভিযুক্ত কয়েকজন দাবি করেছেন, তালিকা প্রণয়নে 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিফলন' ঘটেছে।

তালিকায় কারা: তালিকায় রয়েছেন রাবির ছয়জন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্রলীগ নেতা, তিনজন সাবেক ছাত্রদল নেতা, ছয়জন সাধারণ শিক্ষার্থী ও আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

ইয়াবা ব্যবসায়ী শিক্ষক: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, ড. মুসতাক আহমেদ, আইবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক মোহা. হাছানাত আলী, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বপ্নীল রহমান, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, চিত্রকলা প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম।

ছাত্রলীগের ১১ নেতা : আখতারুল ইসলাম আসিফ (ক্রপ সায়েন্স, সহ-সভাপতি), এরশাদুর রহমান রিফাত (মাস্টার্স, ফিন্যান্স বিভাগ, সহ-সভাপতি), রবিউল আউয়াল মিল্টন (দর্শন বিভাগ ও সহ-সভাপতি), আবু খায়ের মোস্তফা রিনেট (ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, সহ-সভাপতি, ছাত্রলীগ ও সাবেক ছাত্রদলকর্মী), তাওশিক তাজ (বাংলা বিভাগ ও ছাত্রলীগ নেতা),  সাইফুল ইসলাম বিজয় (আইন বিভাগ, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা), শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম (ড্রপ আউট, লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা), অনিক মাহমুদ বনি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী), এসএম আবু হানজালা (ফোকলোর, সহ-সম্পাদক), মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (ফোকলোর, সাংগঠনিক সম্পাদক), রেজওয়ানুল হক হৃদয় (সহ-সভাপতি)।

ছাত্রদলের সাবেক ৩ নেতা: আরাফাত রেজা আশিক (সাবেক আহ্বায়ক, ছাত্রদল), দেলোয়ার হোসেন (সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, ছাত্রদল), নুরুজ্জামান লিখন (সাবেক আহ্বায়ক, হবিবুর হল ছাত্রদল)।

সাধারণ শিক্ষার্থী: এছাড়া ৬ জন সাধারণ শিক্ষার্থী হলেন শফিক (মাস্টার্স, ফিন্যান্স বিভাগ), সেলিম (মাস্টার্স, আইন বিভাগ), নাজমুল ইসলাম পলাশ (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ), পল্লব গুহ (মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ), মাহমুদুল হাসান মুন্না (গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ), এহসান (মাস্টার্স, পরিসংখ্যান বিভাগ)।

৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী: মাহমুদুর রহমান (সহকারী রেজিস্ট্রার, হিসাব শাখা), কেবিএম শাহীন (সেকশন অফিসার, বীমা ইউনিট), রবিউল সরকার রবি (পিয়ন, মেডিকেল সেন্টার), মাসুদ (নিন্মমান সহকারী, প্রশাসন ভবন), তৌহিদুল ইসলাম কালু (ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, ফলিত গণিত), মো. লালন (প্রহরী, স্টুয়ার্ড শাখা), বোরহান উদ্দীন (উচ্চমান সহকারী, হিসাব শাখা), সুগার (নিম্নমান সহকারী, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা)।

এদিকে রাবির পার্শ্ববর্তী রুয়েটের ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক, দুই ছাত্রী ও সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম রয়েছে।   

রুয়েটের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা: পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক কামরুজ্জামান রিপন, শাহনেওয়াজ সরকার সেডু (সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রুয়েট), সংস্থাপন শাখার কম্পিউটার অপারেটর মুরাদ হোসেন, রাজিব হাসান রনি, আসাদুজ্জামান (এমএলএসএস, সিএসই), আখতারুজ্জামান (জুনিয়র অফিসার, সিভিল বিভাগ), এসএম জাকির হোসেন (এমএলএসএস, সিভিল), আশিকুল্লাহ (ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, লাইব্রেরি শাখা)। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রুনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১২ সিরিজের একজন ছাত্রী (শেখ হাসিনা হল, রুম-১১১) ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০১২ সিরিজের অপর একজন ছাত্রীর নাম ইয়াবা চক্রের তালিকায় রয়েছে।