‘ফরহাদ মজহারের স্বীকারোক্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগের সুযোগই নেই’

‘নিঁখোজ’ থেকে ফিরে আসার পর ‘মিথ্যা’ স্বীকারোক্তি আদায় করতে পুলিশ চাপ প্রয়োগ ও মারধর করেছে বলে অভিযোগ এনেছেন কবি-প্রবন্ধিক ফরহাদ মাজহার। তবে তার এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স।

রোববার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘মারধর, নির্যাতন বা জোর করার তো কোন সুযোগই নেই। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। পুলিশ তাকে কোন ধরনের নির্যাতন করেনি।’

ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘দেশে সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহার যা বলেছেন সেটা তার নিজস্ব মতামত।’

চলতি বছরের ৩ জুলাই ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বের হয়ে ‘নিখোঁজ’ হন ফরহাদ মজহার। পরে ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর গভীর রাতে যশোরের ঢাকাগামী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ।

ওই ঘটনায় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করলে তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, ফরহাদ মজহারকে অপহরণের কোন প্রমাণ তারা পাননি। উল্টো মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার অনুমতি চায় পুলিশ।

এরপর গত বৃহস্পতিবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করায় ফরহাদ মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। আদালতের অনুমতি অনুযায়ী রাজধানীর আদাবর থানায় মামলা দায়েরের কথা ছিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার।

আদালতের সিদ্ধান্ত দেখে ঘটনার পাঁচ মাস পর গতকাল শনিবার নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নাটক করিনি, আমাকে যা বলা হয়েছে, তাই করেছি। আদালতে দেওয়া জবানবন্দি আমার না। আমাকে যা লিখে দেওয়া হয়েছে, আমি তাই আদালতে দিয়েছি।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় আমাকে আদাবর থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রতিশ্রুতি দিয়েও আমাকে আমার পরিবারের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। অনেকক্ষণ থানায় বসিয়ে রেখে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি অফিসে বিধ্বস্ত অবস্থায় আমাকে জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য একটি লিখিত কপি দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড বিভ্রান্ত অবস্থায় আদালতকে বলতে পারি যে, আমার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আমার ভীতি ও ট্রমা এখনও কাটেনি। ডিবি অফিস আমাকে দিয়ে যা লিখে নিয়েছে, আমি তাই আপনাকে দিচ্ছি। এরপর তার (আদালত) অনুমতি নিয়ে তার (বিচারক) কক্ষের একটি সোফায় আমি এলিয়ে পড়ি।’

এদিকে ফরহাদ মজহারের সংবাদ সম্মেলনের পর রোববার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘ফরহাদ মজহারের অপহরণ রহস্যজনক। তার কথাবার্তা, আচার আচরণ রহস্যজনক। তিনি হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনমাস পর কেন নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন?’

তিনি আরও বলেন, যারা গুম কিংবা নিখোঁজ হচ্ছেন, পুলিশের দায়িত্ব তাদের ফিরিয়ে আনা। তারা একা ফিরে এলে পুলিশ তদন্ত করবে। অপহরণ হলেও তদন্ত করবে। এক্ষেত্রে তদন্ত করাই পুলিশের দায়িত্ব।