আপনি পড়ছেন

রাজধানীতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। এবার রাজধানীর আদাবরে এক গৃহকর্মীকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যার খবর জানা গেল। হতভাগ্য এই কিশোরের নাম আল আমিন। এই কিশোর গৃহকর্মীর কাজে একটু ভুল হলেই তাকে মাথায় তুলে আছাড় মারা হতো। তাকে থাকতে দেয়া হতো টয়লেটে। এরপর অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত চলতো পিটুনি। জ্ঞান ফিরলে জুটতো পঁচা খাবার।

al amin adabor

রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেকের রোড নম্বর ৪, বাসা নম্বর ২৩/২৫-এর একটি বাসায় গৃহকর্মী আল আমিনের ওপর চালানো হতো এই নির্মম মধ্যযুগীয় বর্বরতা।
১২ বছর বয়সী আল-আমিনকে এমন পাষণ্ডের মতো নির্যাতন করে পৈশাচিক আনন্দ পেত গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তা। প্রায় ছয় মাস ধরে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কঙ্কালসার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল তাকে। আদালতে ১৬৪ ধারায় আসামিদের দেয়া জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এমন নির্যাতন করেও সাধ মেটেনি গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর। গত রোববার ঘাড় মটকে ধরে হত্যা করা হয় আল-আমিনকে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করতে চায় গৃহকর্তা শেখ জোবায়ের আলম ও গৃহকর্ত্রী সাইয়্যেদা রহমান। তবে কাজ হয়নি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় জোবায়ের, তার স্ত্রী সাইয়্যেদা, শাশুড়ি আনজু আরা এবং শ্যালক সাকিব আহমেদকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আল-আমিন হত্যার দায় স্বীকার করে জোবায়ের ও সাইয়্যেদা ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

আল আমিনের চাচা হারুন অর রশীদ বলেন, 'ময়মনসিংহের বাঘাডুবার শিমুলিয়াপাড়ায় বাড়ি আল-আমিনের। দরিদ্র কৃষক রুহুল আমিনের চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় আল আমিন। অভাবের কারণে ঢাকার এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজে পাঠানো হয় তাকে। তবে মৃত্যুর আগে তার ওপর যে এমন অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে সেটি বুঝতেই পারেনি পরিবারের লোকজন।'

আদাবর থানার অপারেশন অফিসার সুজিত সাহা জানান, গৃহকর্মী আল আমিনের শরীরের সর্বত্র ছিল ক্ষতচিহ্ন। দেখতে এমন যেন কঙ্কালের ওপর কোনরকমে চামড়া লাগিয়ে রাখা হয়েছে। কঙ্কালসার এই কিশোরের ওপর এমন অত্যাচার অত্যন্ত মানবিক।

জানা গেছে, অত্যাচারী ওই দম্পতির সন্তানের দেখাশোনা করার কাজের জন্য আল আমিনকে নেয়া হয়। মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো আল-আমিন। কাজে যোগদানের পর থেকে আল আমিনকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হতো না। যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি পরিবারের সঙ্গেও।

কেস পর্যালোচনায় জানা গেছে, আল-আমিনের কাজে সামান্য ভুল হলেই গৃহকর্ত্রী সাইয়্যেদা তাকে নির্মম নির্যাতন করতেন। লোহার স্কেল বা রড দিয়ে প্রহার করা হতো আল আমিনকে। স্বামী ব্যবসায়ী জোবায়ের ফিরলে স্ত্রী সাইয়্যেদা নানা অভিযোগ করতেন আল-আমিনের বিরুদ্ধে। এরপর আবারো চলতো নির্যাতন।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান মনি জানান, কাজে যোগদানের পর আল আমিনের ডায়রিয়া হলে তাকে টয়লেটেই থাকার বন্দোবস্ত করা হয়। রাত ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টয়লেটেই থাকতো আল-আমিন। এরপর দিনের বেলা টয়লেট পরিষ্কার ও গোসল করার পরই সেখান থেকে বের হওয়ার অনুমতি পেত আল-আমিন। দিনভর কাজ করে খাবার পেত একবেলা।

আল আমিন হত্যার করুণ বিবরণ: তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার কাজে ভুলের অজুহাতে আল আমিনকে রড দিয়ে পেটান গৃহকর্ত্রী সাইয়্যেদা। সন্ধ্যার পর আবারো পেটানো হয় আল আমিনকে। রাত ৮টার দিকে আল আমিনের হাত থেকে বাচ্চার দুধের ফিডার পড়ে গেলে স্ত্রীর চিল্লাচিল্লির জেরে আল আমিনকে মাথায় তুলে আঁছাড় মারেন জোবায়ের। এতে মাথা ফেটে গিয়ে গুরুতর আহত হয় আল আমিন। তারপরও পিটুনি থামেনি গৃহকর্তার। এরপর আল আমিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

এরপর আল আমিনকে টয়লেটে ফেলে আসা হয়। গভীর রাতে সাইয়্যেদা টয়লেটে গিয়ে দেখেন আল আমিন অচেতন অবস্থাতেই শুয়ে আছেন। এরপর গৃহকর্ত্রী আল আমিনের ঘাড়ে জোরে লাথি মারেন। তারপরও জ্ঞান ফিরেনি হতভাগা আল-আমিনের। পরদিন রোববার সকালে সাইয়্যেদার মা আনজু আরা টয়লেটের দরজা খুলে দেখেন কিশোর আল আমিন টয়লেটে শুয়ে আছে।

অচেতন আল-আমিনের হাত-পা ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। অবস্থা বেগতিক দেখে আনজু আরা তার মেয়ে-জামাইকে জাগিয়ে তোলে। পরে স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে একজনকে নিয়ে আসেন জোবায়ের। ওই ব্যক্তি পরীক্ষা করে দেখেন আল-আমিন মারা গেছে।

এই ঘটনার পর জোবায়ের আল আমিনের পরিবারকে জানান, 'আল আমিন খুবই অসুস্থ। রোববার সন্ধ্যার মধ্যে তার চাচা হারুনসহ কয়েকজন এসে আল আমিনের তার লাশ দেখতে পান। ঘটনা ম্যানেজ করতে আড়াই লাখ টাকা খরচও করতে চান জোবায়ের। কিন্তু খবর পেয়ে আদাবর থানা পুলিশ রোববার রাতে লাশটি উদ্ধার করে এবং আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আল আমিনের চাচা হারুন।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.