যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলোকে বাঁচানো যাবে তো?

২০১৭ সালে পাশ হওয়া রাস্তা সম্প্রসারণের এক প্রকল্পে কাটা পড়তে যাচ্ছে যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে ঐতিহাসিক এই গাছগুলোকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না নগরবাসী। 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়নাভিরাম জেলা যশোর। শহরটি থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কি.মি.। এটিই যশোর রোড নামে পরিচিত। সড়ক ও জনপথের হিসাব বলছে, রাস্তাটির দুই পাশে রয়েছে প্রায় ২৩শো ১২টি গাছ। যার মধ্যে দুইশর বেশি গাছের বয়স ১৭০ বছরের বেশি। এই শতবর্ষী গাছগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগ-ভালাবাসার স্মৃতি।

পরিবেশবাদীদের দাবি পৃথিবীর অনেক দেশে গাছকে ঠিক রেখে রাস্তা তৈরির ইতিহাস রয়েছে। গাছরক্ষার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

গাছ কেটে এই ঐতিহাসিক রাস্তাটি সম্প্রসারণের প্রকল্পটি পাশ হয় ২০১৭ সালের মার্চে। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'প্রকল্পটি যেভাবে পাশ হয়েছে, সেভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে গাছগুলো কাটা ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোন উপায় নেই। রাস্তা সম্প্রসারণ বিষয়ক টেন্ডার অনুমোদনের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। ফেব্রুয়ারিতে রাস্তার কাজ হয়তো শুরু করা সম্ভব হবে।'

চলতি মাসের ৬ তারিখে যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক মত বিনিময় সভায় গাছ কাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরপর থেকেই যশোর রোডের গাছ না কাটার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। গাছগুলোকে অক্ষত রেখে বিকল্প কোন নকশা বা প্রকল্প করা যেত কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি সড়ক ও জনপথ বিভাগের।

গাছ রক্ষায় সোচ্চার আন্দোলনকারী জিল্লুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, 'রাস্তার দুই পাশে অন্ত ৫০ ফুটের মত খালি জায়গা আছে। যেটা চাইলে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।'

জেলার সবগুলো রাস্তা জেলা পরিষদের এখতিয়ারে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, সকলের সিদ্ধান্তেই গাছ কাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া গাছগুলো বেশ পুরনো হয়েছে। গাছের ডালপালা ভেঙ্গে কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। অনেক গাছের ডালপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ফোর লেন করতে এর বিকল্প নেই। তবে রাস্তা নির্মাণ শেষে আবারো নতুন গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে।

যশোর রোডের গাছগুলো কেন বিখ্যাত: যশোর রোডের এই গাছগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড। মহাসড়কটির বিস্তৃতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত। ব্রিটিশ আমলে যশোরে নির্মিত বিমানঘাঁটির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করতে এই রোডটির আধুনিকায়ন করা হয়।

সে সময়েই অনেক গাছ লাগানো হয়েছিল রাস্তার দুইপাশে। তবে বর্তমান সময়ে যশোর রোড বলতে বোঝায় দমদম থেকে বনগাঁ পেট্রোপোল সীমান্ত পর্যন্ত অবস্থিত নয়নাভিরাম মহাসড়কটি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঐতিহাসিক এই যশোর রোড দিয়েই লাখো শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিতে যান। এরপর শরণার্থীদের সেই গমন নিয়ে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড' নামের একটি কবিতাও রচনা করেন। পরে অবশ্য গায়ক বব ডিলানসহ অন্যরা সেটিকে গানে রূপ দেন। এভাবেই ইতিহাসের অংশ এই যশোর রোড।