খেলার কথা বলে কিশোরী ক্রিকেটারকে ‘গণধর্ষর্ণের’ অভিযোগ

খুলনায় এক কিশোরী ক্রিকেটারকে ক্রিকেট খেলার কথা বলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন এই নির্মম এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যাকে ওই কিশোরী মামা বলে ডাকতো। ভুক্তভোগী ওই কিশোরী এখন সাড়ে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

প্রতীকী ছবি

স্থানীয়রা জানান, নগরীর বানরগাতির একটি এনজিও স্কুল থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে। স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিসহ বিভিন্ন পুরস্কারও রয়েছে তার।

ঘটনা প্রকাশের পর ওই কিশোরীর বৃদ্ধ বাবা বাদী হয়ে রোববার খুলনা সদর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ধর্ষক মোস্তাফিজুর রহমান নয়নসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত নয়ন নগরীর নিরালার ২ নম্বর কাশেম নগর লেন এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা বজলুর রহমান স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, ওয়ার্ড পুলিশিং কমিটির সদস্য।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী ক্রিকেটার জানান, নয়ন মামা (আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে) আমাকে ক্রিকেট খেলার জন্য গল্লামারি যেতে বলেন। আমি অটোতে (ইজিবাইক) করে গল্লামারি যাই। সেখানে আগে থেকেই নয়ন মামা অপেক্ষা করছিল। আমি যাওয়ার পর তিনি আরেকটি অটো নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে রিয়াল ভাইয়াকে উঠায়। পরে অটো পরিবর্তন করে কৈয়া ব্রীজ পার হয়ে মাঝের ভেরি নামক এলাকায় রিয়ালের নানার ঘেরে নিয়ে যায়।

ওই কিশোরী জানায়, ওই ঘেরের বাসায় তাকে বসানোর পর আরও একজনকে ডেকে আনা হয়। এরপর তারা তিনজন মিলে বাইরে বসে কী যেন খায়। এ সময় কিশোরী বুঝে ফেলে তাদের মতিগতি ঠিক নেই। ক্রিকেট খেলার বদলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। পরে সে সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে তারা অস্ত্র বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নয়ন তাকে বলে, ‘তুই যেতে পারবি না, আর এখানে যা হবে তা কাউকে বললে তোকে ও তোর বাপকে গুলি করে মেরে ফেলবো।’

এরপর ভীতসন্ত্রস্ত কিশোরী এ ক্রিকেটারকে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নয়ন ধর্ষণ করে। পরে রিয়াল এবং তার মামাও এসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা ওই কিশোরীর ওপর নির্যাতন চলে। ধর্ষণ শেষে যাতায়াত ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা দিয়ে ওই কিশোরীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা জানান, তার তিন কন্যার মধ্যে বড় দু’ জনের বিয়ে দিয়েছেন। গত কুরবানির ঈদের পর তার স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর থেকে তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে কাশেম নগর এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, নয়ন (আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে) তাদের প্রতিবেশী হওয়ায় তার মেয়ে তাকে ‘মামা’ এবং রিয়ালকে ‘ভাই’ ডাকতো। কিন্তু নয়নসহ তিনজন তার মেয়েকে ক্রিকেট খেলার কথা বলে কৈয়ারবিলে একটি ঘেরের বাসায় নিয়ে সর্বনাশ করেছে। তিনি ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

এলাকাবাসী জানান, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ধর্ষকদের হত্যার হুমকির ভয়ে পুরো বিষয়টি গোপন রাখে। কিন্তু সম্প্রতি তার চলাফেরায় এক ধরণের পরিবর্তন স্পষ্ট হওয়ার পর বাড়ির নারীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায় সে বিষয়টি স্বীকার করে সব ঘটনার বর্ণনা দেয়। পরে ডাক্তারি পরীক্ষায়ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

ধর্ষকের বাবার দৌড়ঝাঁপ: এদিকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর অভিযুক্ত নয়নের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান শুক্রবার রাতে জনকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সরদার, এ্যাড. উজ্জল, ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম সবুজ, প্রাক্তণ ব্যাংকার হাফিজুর রহমান এবং শেখ শাহজালালসহ কয়েকজনকে নিয়ে ধর্ষিতার বাড়িতে যান। সেখানে তারা শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার জন্য কিশোরীর বাবাকে প্রস্তাব দেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী বাবা তখন ধর্ষক নয়ন কর্তৃক তার মেয়েকে বিয়ে এবং দেনমোহর (কাবিননামা) বাবদ ৫ লাখ টাকা প্রদানের শর্তে বিষয়টি মিমাংসা করতে রাজি হন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান শুধুমাত্র ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। যে কারণে মিমাংসা হয়নি।

নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি: বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত নয়নের বাবা আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান নিজের ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই মেয়ে এলাকায় প্যান্ট-শার্ট করে ছেলেদের মত চলাচল করে। দেখলে তাকে ছেলে মনে হবে, আর ক্রিকেট খেলে। তার কারণে এলাকার ছেলেরা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, যে কারণে মেয়েকে অন্য জায়গায় রেখে আসতে বলা হলেও তার বাবা শোনেনি। এখন আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হচ্ছে।’ বিষয়টি মীমাংসার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

খুলনা সদর থানার ওসি এমএম মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।