শিক্ষামন্ত্রী: ছয়টি কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিক প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে মোট ছয়টি কারণ শনাক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা। মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে আইসিটি বিভাগ, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহযোহিতা করছে না। বৈঠকটি বিকাল ৩ টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে ৫টার দিকে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ডাক, টেলিযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, আইসিটি সচিব সুবির কিশোর চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা।

সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ডাকঘর ও রেলপথে প্রশ্নপত্র পৌঁছানোসহ বিভিন্ন কাজে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ সংস্থা জড়িত। ফলে সুষ্ঠুভাবে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশ্নফাঁসের পেছনে মোট ছয়টি কারণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রথম কারণ: বিজি প্রেস প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারা প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও সেগুলো স্মৃতিতে ধারণ করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াতেও প্রশ্নফাঁস হতে পারে।

দ্বিতীয় কারণ: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেন না।

তৃতীয় কারণ: জনবলের অভাব থাকা সত্বেও অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ভেন্যুগুলো থেকে মূল কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। যার কারণে ৩০ মিনিটের আগে কেন্দ্র সচিব প্রশ্নপত্র খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানেও ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

চতুর্থ কারণ: পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কিছু কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কারণে মূলপ্রশ্ন ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে।

পঞ্চম কারণ : প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা বাহিনীর প্রয়োজনীয় লোকবলের অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতা রয়েছে। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো কঠিন।

ষষ্ঠ কারণ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসির তেমন কোন সক্ষমতা নেই। ফলে প্রশ্ন আপলোডকারীদের শনাক্ত কিংবা সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টগুলোকেও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। এরপর আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এই দুই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পদক্ষেপ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা।