জয়কে ‘হত্যার’ ষড়যন্ত্র, ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র’ মামলায় শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল।

গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত মঙ্গলবার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে ওই সময় বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর আসে।

গণমাধ্যমের কাছে পরে খবর প্রকাশের বিষয়ে এসআই জালাল বলেন, ‘পর্যবেক্ষণের জন্য নথিপত্র এতদিন মুখ্য মহানগর হাকিমের খাস কামরায় রাখা ছিল। বৃহস্পতিবার বিচারকের দপ্তর থেকে সেটি আদালত পুলিশের হাতে এসেছে।’

অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান,  জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। এদের মধ্যে মামুন ও মিজানুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মামুনের ছেলে রিজভী যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পরে তা অন্য আসামিদের কাছে সরবরাহ করেন।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এ ষড়যন্ত্রে অর্থ যোগান দিয়েছেন। এছাড়া তিনি এ ষড়যন্ত্রে পরামর্শদাতা হিসেবেও যুক্ত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। অভিযোগ আছে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জয়ের গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেন সিজার। অন্যের গোপন তথ্য জানার এ আগ্রহের অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় নিউইয়র্কের একটি আদালত। আদালতের রায়ে সিজার কারাগারে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের তার ব্যক্তিগত তথ্য পেতে সিজার এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেন। ওই তথ্য পাওয়ার পর সিজার তা বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে সরবরাহ করেছিলেন।

এ ঘটনায় জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ঢাকার পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে আটকের পর ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সিনিয়র এ সাংবাদিককে। সে সময় শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান দাবি করেছিলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক’ হিসেবে নিবন্ধ লেখার জন্যই তার স্বামী ওই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান শফিক রেহমান। এ মামলার অপর আসামি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবান্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাড়ে তিন বছর কারাগারে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান।