নতুন দুটি প্রাণী আবিষ্কার, বাংলাদেশি অধ্যাপকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

নতুন দুটি প্রাণী আবিষ্কার করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। তিনি নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া (Neumania nobiprobia) ও অ্যারেনুরাস স্মিটি (Arrenurus smiti) নামে নতুন দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করেছেন।

নিজের আবিষ্কার সম্পর্কে বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রাণিজগতের প্রতিটি প্রাণীই খাদ্যচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের একটির অনুপস্থিতিতে খাদ্যশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আমাদের জলরাশি অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। কিন্তু গবেষণার অপ্রতুলতা, মানবসৃষ্ট দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আবিষ্কারের পূর্বেই অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব।’

বেলালের সহযোগী হিসেবে তিনি নিজেসহ চার দেশের পাঁচজন গবেষক কাজ করেছেন। তারা হলেন- মন্টেনিগ্রোর ভ্লাদিমির পেসিক, ভারতের তাপস চ্যাটার্জি, পোল্যান্ডের আন্দ্রেজেঝ জাওয়াল ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম।

বেলাল হোসেন তার বিভাগের ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম এর সহযোগীতায় গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বিভিন্ন নদী-নালা, পুকুর, খাল ও বিল থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত নমুনা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে শনাক্ত করার পরে মধ্য ইউরোপের দেশ মন্টেনিগ্রোতে নমুনাগুলো চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করে ফলাফলের জন্য সেখানকার এক গবেষকের কাছে পাঠান।

পরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সিস্টেমেটিকস অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড অ্যাকারোলজিতে পাঠায় গবেষক দল। গত ১৫ মে লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়ে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- ‘First records of water mites from Bangladesh (Acari, Hydrachnidia) with description of two new species by Vladimir Pesic, Mohammad Belal Hossain, Tapas Chatterjee, Md. Saiful Islam and Andrezej Zawal’।

কিছুটা মাকড়সার মতো দেখতে মাইটস প্রাণিজগতের আর্থোপড পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত। অধ্যাপক বেলাল ও তাঁর গবেষক দলের আবিষ্কৃত প্রাণী দুটি অনেকটা সে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তাই তাদের আবিষ্কৃত নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া ও অ্যারেনুরাস স্মিটিও আর্থোপড পর্বের একারিয়া বর্গের অন্তর্গত প্রাণী।

নব আবিষ্কৃত প্রাণী দুটি জীবজগতের খাদ্যচক্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা সাধারণত পুকুর, নদী, খাল বা জলাশয়ের পানির ওপরে ভাসমান উদ্ভিদের সঙ্গে ঝুলে থাকে। এরা আকারে ২-৩ মিলিমিটার, এদের চার জোড়া সন্তরণ পা ও দুটি শুঁড় থাকে। এরা দেখতে হালকা লাল ও হলুদ বর্ণের। এরা লার্ভা অবস্থায় অন্য জলজ প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এবং ওই প্রাণীর দেহ থেকেই খাবার সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে তারা খাবার হিসেবে উদ্ভিদকণা গ্রহণ করে।

‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ ও ‘অ্যারেনুরাস স্মিটি’ নামে প্রাণীজগতে সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কৃত ওই প্রাজাতী দুটির নাম করণ করা হয়েছে যথাক্রমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ও নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত অ্যাকারোলজিস্ট হ্যারি স্মিথের নামানুসারে।

এই আবিষ্কারের মূল নায়ক বাংলাদেশি গবেষক বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করার পরে যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগেও তিনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নেফটাইস বাংলাদেশি (Nephtys bangladeshi) ও দেশের বাইরে ব্রুনাইয়ের সমুদ্র এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়োপিসা ব্রুনেইয়েনসিস (Victoriopisa bruneiensis) নামে দুটি অমেরুদণ্ডী পলি কীট আবিষ্কার করেছেন।