২২ বছরে মাত্র একবার গ্রামে ঈদ করেছেন ট্রাফিক পুলিশ ইউসুফ

ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে নিশ্চয় গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উদযাপন করছেন? করারই কথা। কিন্তু জানেন কি? কিছু মানুষ আছেন যারা এই ঈদের ছুটিতেও দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। আমরা যখন আমাদের প্রিয় বাবা-মা কিংবা সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি তখন তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন।

ফাঁকা রাজধানীর দেখভালে নিয়োজিত রয়েছেন অনেক র‍্যাব-পুলিশ-ট্রাফিক পুলিশসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তেমনই এক ট্রাফিক পুলিশের গল্পগাঁথা তুলে ধরেছে অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর। তাদের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে ইউসুফ হোসেন নামের এক ট্রাফিক পুলিশের কর্মজীবন। যিনি তার ২২ বছরের চাকরি জীবনে মাত্র একবার গ্রামে গিয়ে ঈদ করেছেন।

ইউসুফ হোসেন বলেন, 'চাকরির প্রথমের দিকের বছরগুলো খুব খারাপ লাগতো। পরিবার-পরিজনকে ছাড়া ঈদ সবসময় কষ্টের। এখনও কিছুটা কষ্ট হয়, তবে মেনে নিয়েছি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।'

ঈদের দিনে ডিউটি প্রসঙ্গে ইউসুফ হোসেন বলেন, 'সবাই যদি গ্রামে যাই তাহলে ঢাকা দেখবে কে। অন্যদের আনন্দের জন্য নিজের আনন্দকে উৎসর্গ করেছি এটাই বা কম কিসে। গ্রামে আমার বৃদ্ধা মা রয়েছে। তার জন্য মনটা কাঁদে কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। প্রতিবছরই ভাবি যাবো কিন্তু ২২ বছর কেটে গেলো যেতে পারিনি।'

তিনি বলেন, 'ঈদের দিনে স্কুলের বন্ধুরা যখন গ্রামে গিয়ে ফেসবুকে নানা রকম ছবি পোস্ট করে, ফোন করে তখন আসলে বুকের মধ্যে হাহাকারটা অনেক বেড়ে যায়। কখনো হয়তো চোখ ভিজে যায়। কিন্তু মেনে নিয়েছি।'

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার মধ্যভাণ্ডারিয়া গ্রামের অধিবাসী ইউসুফ হোসেন। ১৯৯৭ সালে তিনি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। চাকরির নানা ধাপ পেরিয়ে ২০০৯ সালে ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন তিনি। চাকরিকালীন সময়ে রাঙ্গামাটিতে থাকাকালে আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে সর্বশেষ গ্রামে মায়ের সঙ্গে ঈদ করেছেন। এরপর আর সুযোগ পাননি।

তিনি বলেন, 'বাবা মারা গেছেন। বৃদ্ধা মা প্রতিবছরই ঈদ করার অনুরোধ করেন। প্রতিবারই মাকে বলি, ছুটি পেলে আসতে পারি। কিন্তু সেটি আর হয় না। একবার এক বস ছুটি দিয়েছিলেন। কিন্তু সহকর্মী এক বন্ধুর বাবা অসুস্থ হওয়ায় সেই সুযোগটি তাকে দেয়া হয়।এরপর আর গ্রামে যাওয়া হয়নি।’

শুধু ট্রাফিক পুলিশ ইউসুফ হোসেনই নয়। এমন হাজারো পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বছরের পর বছর সাধারণ মানুষের ঈদের খুশির জন্য নিজের আনন্দ জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কারা কতটুকুই বা মনে রাখছেন?