আপনি পড়ছেন

নিপীড়নমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা করেছেন শিক্ষকরা। ৮ জুলাই, রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে এ পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রা হিসেবে শিক্ষকরা সেই সব স্থানকে বেছে নিয়েছেন যেসব স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

podojatra

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব),
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু করেন। ১২টার দিকে তারা শহীদ মিনারে পৌঁছে শিক্ষকরা হামলার ঘটনায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

প্রতিক্রিয়া জানানো পর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান সঞ্চালনাকালে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে, আমাদের উচিত ছিলো আগেই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখলাম কিভাবে ছাত্রদের পিঠে হাতুড়ি মারা হচ্ছে। এই হাতুড়ি আসলে পিঠে মারা হয়নি, বাংলাদেশের মেরুদণ্ডে মারা হয়েছে।’

podojatra 2018পদযাত্রা শেষে শহীদ মিনারে বক্তব্য রাখছেন আসিফ নজরুল, ছবি: প্রতিবেদক

পদযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক অাসিফ নজরুল বলেন, ‍‘অামার শিক্ষার্থীরা, যারা কোটা সংস্কার অান্দোলনে অাহত হয়েছে, হাসপাতালে অাছে, অজ্ঞাত স্থানে অাছে, মামলার শিকার হয়েছে তাদের প্রতি উদ্বেগ থেকে অাজকে এখানে এসেছি। যারা হাতুড়িপেটা করেছে, ল-এর প্রফেসার হিসেবে বলছি, ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর অাঘাত করা যাবজ্জীবন যোগ্য অপরাধ। যাবজ্জীবন যোগ্য অপরাধ যারা করেছে তাদের গ্রেফতার দাবী করছি। যারা অাহত তাদের চিকিৎসা সেবা দাবী করছি। সকল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবী করছি।’

এই কলামিস্ট বলেন, ‘যারা নিপিড়ীত ছাত্রের পাশে দাঁড়াতে ভয় পায়, অথবা লোভের কাছে অাত্মসমর্পণ করে অাসতে চান না। তারা অবশ্যই নিন্দার যোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নিন্দা জানাচ্ছি। অামরা অতীতে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতো। অন্তত চিকিৎসা সেবার ব্যাবস্থা করতো। অামরা সেই জায়গা থেকে সরে এসেছি!’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘ন্যায় সংগত অান্দোলন’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন করতে গিয়ে অামাদের সন্তানরা চার ধরনের অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। তাদেরকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে, মেয়েদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, গুরুতর অাহত করা হয়েছে- এটা প্রথম অন্যায়। দ্বিতীয় অন্যায় হচ্ছে- অাহতদের চিকিৎসা ব্যাহত করা হয়েছে। এই দেশের হাসসপাতাল কোনো সরকার, ব্যাক্তির বা রাজনৈতিক দলের নয়। এটা জনগণের অর্থে পরিচালিত হাসপাতাল। অথচ তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয় অন্যায়- মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ অন্যায়- নানারকম অপবাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করার অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। প্রতিবাদ হয়েছে বিধায় এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রতিবাদ করার অধিকার যারা অস্বীকার করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সংবিধান বিরোধী। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা বিরোধী।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কোটা সংস্কার অান্দোলন একটি যৌক্তিক দাবী। এই জন্য এর প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন। ৫৬ শতাংশ কোটা অযৌক্তিক ও অন্যায়, সরকার সেটা স্বীকার করেছে। সরকার সেটা স্বীকার করে কমিটি গঠন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু তারা কমিটি গঠনে বিলম্ব করেছে। এ কারণে ছাত্ররা অাবার অান্দোলন করেছে। এই অান্দোলন যদি কন্টিনিউ না করতো তাহলে এই কমিটি গঠন হতো না।’

‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকার এই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বলেন, ‘যে সাধারণ ছাত্ররা অান্দোলন করছে, তাদের উপর নৃশংস ও বর্বর হামলা হয়েছে। অভিভাবকরা শিক্ষকরা যখন এর প্রতিবাদ করতে দাঁড়িয়েছেন তাদের উপর হামলা করা হলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতুড়ি দিয়ে যে নৃশংসতা করা হয়েছে, এমন নৃশংসতা অাগে দেখিনি। যারা হামলার শিকার হয়েছে, তাদেরকেই মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা দ্বারা উপলব্ধি করি, এখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই। যারা অাক্রমণ করেছে তারা দৃশ্যমান, চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। তাদের অাইনের অধীনে অানতে হবে। হাসপাতাল থেকে তাদের কেনো বের করে দেওয়া হলো, সেটা তদন্ত করতে হবে এবং কোটা সংস্কার এর দ্রুত সমাধান করতে হবে।’

ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর কাজী আফসার হোসেন বলেন, ‍‘মুক্তিযুদ্ধের তিনটি ঘোষিত নীতি ছিলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার। কোথায় সাম্য; যখন বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর হাতুড়ি পড়েছে, সংবিধানের ওপর হাতুড়ি পড়েছে এবং জনগনের অধিকারের ওপর হাতুড়ি পড়েছে? কোথায় সাম্য, কোথায় ন্যায়বিচার? অনেক শিক্ষকই প্রতিবাদে আসছে না। একদল আসবে না কারণ তারা সরকারের চামচা! আরেক দল বলছে আমরা যেতে চাই কিন্তু ভয় পাই! সুতরাং আমরা কোন অবস্থার মধ্যে আছি সেটি বোঝা যায়!’

পদযাত্রা শেষে শিক্ষকদের পক্ষে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। দাবি পেশ করার আগে তিনি বলেন, "পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম যে ‌‘না’ সেটি উচ্চারণ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ যখন বলেন শুধুমাত্র উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। আপনাদের মনে আছে তখনই ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বলে ওঠে ‘না’। এই যে ‘না’ বলার যে শক্তি, এখান থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে বিভিন্ন সময়। ১৯৫২ সালে এখানে গুলে চলে। এখানে এখন গড়ে ওঠেছে শহীদ মিনার। ১৯৭১ সালে এটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, আবার গড়ে তোলা হয়েছে।"

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, 'সেই শহীদ মিনারে আমরা দেখলাম প্রতিবাদরত একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। যে শহীদ মিনার আমাদের দাবির মূর্ত প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, সেই শহীদ মিনারের সামনে দাবিকে আমরা ধ্বংস করতে দেখেছি। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরা পিছনে ছিলেন, আরো বেশি করে থাকবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সকল সদস্যদের নিয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে গর্জে উঠেছে তেমনি আবারো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা গর্জে উঠবে।’

এরপর শিক্ষকদের পাঁচ দাফা দাবি সবার সামনে পড়ে শোনান তিনি। দাবিগুলো হল- ‘সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল হামলাকারীর বিচার, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদেে নামে করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারকে করেতে হবে, নারী আন্দোলনকারীদেে বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন (সাইবার ও শারীরিক) এর বিচার এবং দ্রুত কোটা সংস্কারের প্রতিশ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.